চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। আজ সোমবার রাতে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার নগরের পতেঙ্গা থানায় মামলাটি করেছেন। তবে মামলার এজাহার, বিমান প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য এবং একজন সাংসদের বক্তব্যে ভিন্নতা দেখা যায়। অভিযানসংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বক্তব্যেও অস্ত্র ও গুলি নিয়ে ভিন্নতা পাওয়া যায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, কমান্ডো অভিযানে নিহত ব্যক্তির কাছে যাত্রী ও ক্রুরা ‘অস্ত্র ও বোমাসদৃশ বস্তু’ দেখেছেন। ওই ব্যক্তি দুটি পটকা-জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান জানান, এজাহারে গুলিতে নিহত পলাশ আহমেদের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, উড়োজাহাজে থাকা এক তরুণ বোমাসদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। তাঁর কিছু দাবিদাওয়ার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শোনানোর জন্য উড়োজাহাজের ক্রুদের বলেন। একপর্যায়ে পটকা-জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া না হলে বিমানটি ধ্বংসের হুমকি দেন পলাশ। গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানটি ছেড়ে আসার ১৫ মিনিট পর অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী বোমাসদৃশ বস্তু দেখিয়ে বিমানের ককপিটে ঢুকতে চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁর কাছে বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু দেখা যায়। পরে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপদে জরুরি নির্গমন পথ দিয়ে নামানো হয়। ইতিমধ্যে বিমানটি ছিনতাইয়ের খবর দেওয়া হলে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো এসে উপস্থিত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত ওই তরুণকে বিমান থেকে নামানো হয়। পরে দেখা যায় তিনি মারা গেছেন।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় কমান্ডো অভিযানের সময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদল। তিনি বলেন, ওই বিমানের পাইলটের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। পাইলট যুবকটির হাতে পিস্তল দেখেছেন।
বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, বিমানবন্দরে যে তল্লাশি ব্যবস্থা, তাতে অস্ত্র নিয়ে উড়োজাহাজে যাওয়া সম্ভব নয়। বিমানবন্দরের তল্লাশি ব্যবস্থায় অস্ত্র নিয়ে গেলে তা দৃশ্যমান হয়। সবকিছু খতিয়ে দেখা হয়েছে। অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।
বিমান প্রতিমন্ত্রীই আবার বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা নিয়ে আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন। তাতে তিনি নিহত ব্যক্তিকে বিমানে যাত্রীবেশে অস্ত্রধারী বলে উল্লেখ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিমানবন্দরে অবতরণের পূর্বে বিমানে যাত্রীবেশে এক অস্ত্রধারী আকস্মিক যাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিমান উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ও চিৎকার করতে থাকে। বিমানের কর্তব্যরত ক্যাপ্টেন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, পেশাদারি ও সাহসিকতার সঙ্গে দুষ্কৃতকারীকে কথোপকথনে ব্যস্ত রেখে কালক্ষেপণ করেন। ইতিমধ্যে বিমানের ক্রুদের সহায়তায় বিমানের সকল যাত্রীকে নিরাপদে বের করে আনা হয়।’ মাহবুব আলী বলেন, ‘একপর্যায়ে কমান্ডো অভিযানে গুলির আঘাতে ছিনতাইকারী আহত হয়, পরে মৃত্যুবরণ করে।’
এদিকে রোববার রাতে চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘ছিনতাইকারী যুবককে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন প্যারা কমান্ডোরা। তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করেন। উড়োজাহাজের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে গোলাগুলি হয়। এতে তিনি আহত হন। পরে জানতে পারি, তিনি মারা গেছেন।’ তবে এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান বলেন, ‘ শুনেছি তিনটা শব্দ হয়েছে। যাত্রী ও ক্রুদের জিজ্ঞেস করেছি। তাঁরা বলেছেন, ধোঁয়া বের হয়েছে। গুলি বের হলে এয়ারক্রাফটে ছিদ্র হয়ে যাওয়ার কথা। চিহ্ন থাকত। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাইনি। খেলনার পিস্তল হলেও ঠুস ঠুস ঠুস শব্দ হয়।’
ওই ঘটনার পর রোববার রাতে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওই যুবকের কাছে পাওয়া বস্তুটি খেলনা পিস্তল। তাঁর কাছে কোনো বিস্ফোরকও ছিল না।
রোববার ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজটির (বিজি-১৪৭ ফ্লাইট) ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরই উড়োজাহাজটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। প্রায় ২ ঘণ্টার টান টান উত্তেজনার পর উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টার অবসান ঘটে। কমান্ডো অভিযানে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী ব্যক্তি নিহত হন। পরে র্যাব জানায় নিহত ব্যক্তির নাম মো. পলাশ আহমেদ। বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার পিরিজপুরে। বাবার নাম পিয়ার জাহান সরদার।