মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন, উত্তরা প্রতিনিধিঃ রাজধানী তুরাগের প্রাণকেন্দ্র ৫৩নং ওয়ার্ডটি নতুন ভাবে উত্তর সিটিতে যুক্ত হয়েছে। এখানে প্রথমেই ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকলেও এখন আছে দুইজন। বাকী দুইজন প্রার্থী নিজেরা অন্যদের সমর্থন দিয়ে চলে গেলে কার্যত এখানে নির্বাচনটি জমে ওঠে। বর্তমানে যারা প্রার্থী আছেন। তাদের মাঝে অন্যতম হলেন হাজী ফিরোজ আলম ও প্রবীন মেম্বার নাসির উদ্দিন । মূল প্রতিদ্বন্ধিতা এ দুজনের মাঝে হলেও এখানে রয়েছে অনেক হিসাব নিকাশ। তুরাগের সাবেক ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটির এই ৫৩ নং ওয়ার্ড গঠিত । সাবেক ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড-এ আগের তিনজন মেম্বার এখানে প্রতিনিধিত্ব করলেও কোন উন্নয়ন তারা দেখাতে পারেন নাই। এ নিয়ে এ ওয়ার্ড বাসির মনে দারুন ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে।
দীর্ঘদিন তারা বড় একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। এখন সামনে নির্বাচন । তাই দুই প্রার্থীর মাঝে চলছে তুলনামূলক বিশ্লেষণ। সাবেক এই ওয়ার্ড গুলোর অতিতের অবস্থা মনে করেই আগামী নির্বাচনের প্রার্থী বাচাই করবেন বলে একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
সাবেক মেম্বার নাসির উদ্দিন বেশ কয়েক বছর থেকেই জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু ভোটাররা তার কাছ থেকে তেমন কোন কিছুই অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই নির্বাচনের নতুন হিসাব নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন সর্বাধিক ভোটার অধ্যাষিত এলাকার জনপ্রিয় প্রার্থী, সদালাপি স্থানীয় পরিচিত মুখ হাজী ফিরোজ আলম। রানাভোলা, নয়ানগর, ফুলবাড়ীয়া, দিয়াবাড়ী এলাকায় বেশি সংখ্যক ভোটের প্রতিনিধিত্ব তার হাতে থাকায় নির্বাচনী হিসাব ঘুরে যাচ্ছে। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ ভাবে নির্বাচনী মাঠে যে ধরনের শোরগোল ও ডামাডোল দেখা যায় কেন্দ্রে গিয়ে সে অবস্থা থাকবে না। মানুষ হিসাব করছে কে তাদের কাছের লোক। তুলনামূলক বিচারে স্থানীয় আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী মুখে একটা প্রকাশ করলেও বাক্সে গিয়ে অন্য চরিত্র ধারণ করতে পারেন। এমন হিসাবে আগামী কয়েক দিনের নির্বাচন খুব জোড়ালো ভাবে আগাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন এই সাবেক ওয়ার্ডটি হরিরামপুর ইউনিয়নের নয়ানগর, নলভোগ, শুক্রাভাঙ্গা, ধরঙ্গারটেক, শেখদির টেক, দিয়াবাড়ী, তারারটেক, নিমতলির টেক, চটন্ডালভোগ, রানাভোলা, ফুলবাড়ীয়া, বামনারটেক নিয়ে গঠিত। ওয়ার্ডটিতে লক্ষাধিক লোকের বসবাস হলেও ভোটার সংখ্যা ২৭,৮০০ জন। ২০১৬ সালের জুনে হরিরামপুর ইউনিয়নের কাঠামো ভেঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৩নং ওয়ার্ড গঠিত হয়। ওয়ার্ড বাসির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এ ওয়ার্ডের দৃশ্যমান কোন উন্নতি গত ১০ বছরেও হয়নি। ওয়ার্ডের ছোট গলি রাস্তা থেকে শুরু করে বাড়ীর চলার রাস্তা বছরের অধিকাংশ সময়ই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। কোন কোন রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে, তা পায়ে হেটেও চলাচলের অযোগ্য। এলাকায় গ্যাসের সংকট যেমন আছে, নেই পর্যাপ্ত খোলা মাঠ ও শিশু পার্ক। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সোহেল রানা বলেন এ অবস্থার জন্য সাবেক মেম্বাররাই দায়ী। মেম্বারদের কেউ কেউ এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আবার কিছু মেম্বার অনেক প্রার্থীর পক্ষও নিচ্ছেন। কিন্তু ভোটাররাও সচেতন। তারা বিচার করছেন, কার দ্বারা কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে। এখন কে কার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। এই বিবেচনাগুলো সামনে আনলে প্রার্থীরা নতুন জনপ্রতিনিধির দিকেই ঝুকবেন এটা সাদা চোখে দেখা যায়। কে জিতবেন? এমন অংক কষার সুযোগ নেই।
সাধারণ ভোটারদের এই কথা গুলোও প্রতিবেদক দুই প্রার্থীর নিকট উপস্থাপন করলে একেক জনের একেক ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। এই বিষয়ে নতুন এবং স্থানীয় জনপ্রিয় প্রার্থী ফিরোজ আলম বলেন এ ওয়ার্ডের কোন উন্নয়ন আগে হয়নি এটা সত্য। এ ওয়ার্ডটি রাজধানীর অংশ হলেও এটি গ্রামের অন্য যে কোন ওয়ার্ড থেকেও শোচনীয়। আমরা এসব সমস্যার নিদারুন ভুক্ত ভোগী। এই অবস্থার পরিত্রাণ চাই। এলাকাবাসী আমাকে সেই কাজের দায়িত্ব দিতে চায় বলেই আমি তাদের কথায় নির্বাচনে এসেছি। এখন বিচারের ভার তাদের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি। মানুষ আমার পক্ষে স্বস্ফুর্ত ভাবে মাঠে নেমেছেন। তারা লাটিম মার্কায় ভোট দিতে চায়, সেই সাথে সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তাও চায়। আমি তুরাগ থানা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সকলের কাছে আর্জি জানাতে চাই, মানুষকে ভোট দিতে দেন, ফল যাই হোক, তাই মেনে নিব।
অপর কাউন্সিলর প্রার্থী নাসির উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসীর মৌলিক চাহিদা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হবে। বিশেষভাবে পানি ও পয়োনিস্কাশন নালাসহ রাস্তা, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবায় চিকিৎসাকেন্দ্র, খেলার মাঠের ব্যবস্থা এবং মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।