সিলেট প্রতিনিধি :: ভাষা দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে পাওয়া তিনদিনের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে সিলেটে বেড়াতে এসেছেন লাখো মানুষ। এত পর্যটক এক সাথে এভাবে সিলেটে অতীতে কখনো দেখা যায়নি। এতে করে অবাক হচ্ছেন হোটেল মালিক বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।
তিনদিনের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে শীতের শেষ সময় ও বসন্তে দিনের গরম-রাতের হিমশীতলতার ছোঁয়া নিতে সিলেটের ভীড় জমিয়েছেন ভ্রমন পিপাসু সৌন্দর্য্য প্রেমিক পর্যটকরা। ফলে পর্যটকে সরগরম হয়েছে সিলেট নগরীর পর্যটন স্পটগুলো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকের পাশাপাশি ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসছেন স্থানীয়রাও।
ফলে কোথাও জায়গা নেই! না বন্দরবাজার-জিন্দাবাজারের মধ্যমানের হোটেলগুলোতে, না দরগাগেইট এলাকার। সবগুলোতে ঝুলানো ‘সিট খালি নেই’। মৌসুমের শেষ প্রান্তের টানা এ ছুটিতে সিলেটে তিল ধারণের ঠাঁই নেই অবস্থা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবারের সিলেট নগরীর চিত্রটা ছিল এমনই। একেতো মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি, তার সাথে শুক্র ও শনিবারের নিয়মিত সরকারি ছুটি মিলিয়ে যারা ৩ দিনের সিলেট সফরে এসেছিলেন বসন্তটাকে আরও রাঙিয়ে নিতে, তাদের আগমনের অভিজ্ঞতাটা মোটেও সুখকর নয়, তা বলাই বাহুল্য। প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সিলেটের আকর্ষণ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন ওলিকুল শিরোমনি হযরত শাহ জালাল (র.) ও তাঁর সুযোগ্য ভাগ্নে হযরত শাহপরাণ (র.)। তাঁদের সাথে আছেন এ অঞ্চলের আদি মুসলিম হযরত গাজী বুরহান উদ্দিন (র.)।
জাফলং-রাতারগুল-লালাখাল-পাংথুমাই-লোভাছড়া-শাপলা বিল-ভোলাগঞ্জসহ সিলেটের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো যেমন সারাদেশের পর্যটকদের সিলেটমুখী করছে, তেমনি আধ্যাত্মিকতাবাদে বিশ্বাসী ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছেও এই মহানগরী অতিগুরুত্বপূর্ণ।
আর শুক্রবার সামনে রেখে বৃহস্পতিবার শাহজালাল (র.) এর দরগাহ প্রাঙ্গনে যেসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি হয় তাও মুসল্লীদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাই এই দিনটিতে এমনিতেই সিলেটে পর্যটকরা আসেন অন্যান্য দিন থেকে বেশি। ২১ ফেব্রুয়ারিকে (বৃহস্পতিবার) তা আরো বাড়িতে দিয়েছে পর্যটকদের আগমনের স্রোত।
৩ দিনের ছুটি উপভোগে সিলেটমুখী মানুষের ঢল নেমেছিল। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই মাজার এলাকা ও রাত ৯টার পর থেকে সিলেট মহানগরীর প্রায় সব আবাসিক হোটেলের রিসিপশনে ‘সিট খালি নেই’ ঝুলতে থাকে। অনেকেই সিট জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে চেনা-জানাদের ফোনে সমস্যাটি অবগত করতে থাকেন। এতে সমাধানও জোটেছে কারও কারও ভাগ্যে। কারও বাসায় আড্ডা দিয়ে রাত কাটিয়েছেন। কেউবা ভ্রমনক্লান্তি দুর করতে মেঝে বা বারান্দায় অন্তত ঘুমাতে পেরেছেন। তবে সিলেট নগরীতে যাদের চেনা-জানা কেউ নেই, তারা সমস্যায় পড়েছেন বেশি। গোটা পরিবার নিয়ে তাদের হোটেল বা কোন ভবনের সিঁড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
তেমনি একটি পরিবারের সাথে কথা হয় দক্ষিন সুরমার ফেমাস হোটেলের কথা হয় নেত্রকোনা পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আলকাছ মিয়ার সাথে। তিনি এসেছিলেন মাজার জিয়ারত ও জাফলং ঘুরে দেখতে। মধ্যরাতে প্রাইভেট গাড়ী সিলেট পৌঁছে সিলেট নগরী তন্ন তন্ন করে অবশেষে উঠেছেন ফেমাস হোটেলে।
অন্য আরেক পর্যটক বলেন, ভাই ভোর রাতে সিলেটে পৌছে গোটা সিলেট নগরী ঘুরেও একটু বিশ্রামের জন্য কোন হোটেল পাইনি। এমনটি হবে জানলে আসতাম না। তবে চেষ্টা চলছে। দেখি কোথাও সিট পাওয়া যায় কি-না। কথা হয় বেশ কয়েকজন হোটেল মালিক বা ব্যবস্থাপকের সাথে। তারাও অবাক! ভীড় হবেই তেমন একটা অনুমান তারা আগে থেকেই করেছিলেন, তবে তা এমন পর্যায়ের হতে পারে তা কিন্তু কেউ কল্পনাই করেন নি। হযরত শাহজালাল (র: ) মাজার দরগাহ রোড আলমাস হোটেল, হোটেল আল-আরব, হোটেল উর্মি, হোটেল অনুপম, আল জালাল, আকসা, ময়রুন নেছা, আল আমিন, হোটেল জিয়া, হোটেল কোরেইশী, তালতলা এলাকার হোটেল ইস্ট ইন, হোটেল ব্রিটেনিয়া, হোটেল সুফিয়া, হোটেল গুলসানসহ বেশ কয়েকটি হোটেলে গিয়ে দেখা যায় হোটেলের সামনে সিট খালি নেই নোটিশ সাঁটানো। নগরীর প্রতিটি হোটেল বোর্ডারে পরিপূর্ণ থাকায় বুধবার রাতে নগরীর কোনো হোটেলেই সিট পাননি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা।