ঢাকা: গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। ফুটে আছে টকটকে লাল গোলাপ। সকালের শিশির ভেজা গোলাপে নরম আলোর ঝিকিমিকি। পুরো গ্রামজুড়েই ফুলের সৌরভ। সাথে সকালের শিশির ভেজা গোলাপে নরম আলোর ঝিকিমিকি। দৃশ্যগুলো দেখার সময় ফুলের বাগানে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে! সবমিলিয়ে মুগ্ধ হবার মতো একটি জায়গা।
শুধু সৌরভ নয় সৌন্দর্য দিয়েই গোলাপ একটা গ্রামের নাম পাল্টে দিয়েছে। সাদুল্লাহপুরকে এখন পর্যটকরা ‘গোলাপ গ্রাম’ হিসেবেই বেশি চেনেন। নগরের ইট কাঠ পাথরের ঝনঝন যান্ত্রিক জীবন থেকে ছুটি নিয়ে একদিনের জন্য যেতে পারেন এই গ্রামে। চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে সেজে আছে পুরো গ্রাম যেদিকে চোখ যায় গোলাপের ক্ষেত। গোলাপের নয়নাভিরাম দৃশ্য ও মনমুগ্ধকর সুবাস গ্রাস করবে আপনাকে।
ঢাকার খুব কাছেই সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদীর তীরে এই গোলাপ গ্রাম সাদুল্লাহপুরের অবস্থান। গোলাপের সুগন্ধ আর চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে পুরো গ্রাম সেজে আছে। শুধু সাদুল্লাহপুর নয়, আশপাশের শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি গ্রামের গোলাপের রাজ্যে চোখ আটকে যাবে যে কারো। সড়কের পাশে, বাড়ির সামনে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সব জায়গাতেই গোলাপ চাষ করা হয়। সকালে গোলাপের বাণিজ্যিক বাগান গুলোতে কাউকে কোনো কাজ করতে দেখা যায় না। তবে দুপুরের পর প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল কাটা, ফুল বাছাই, ফুল ভেজানো, ফুল বাঁধা সবই যেন কৃষক শেষ করেন সন্ধ্যার আগে। কারণ সন্ধ্যোর পরই জমে মোস্তাপাড়া ও শ্যামপুর ফুল বাজার। যেখানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ফুলের পাইকাররা এসে ফুল কেনেন।
গোলাপের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই দল বেঁধে চলে আসেন সাদুল্লাহপুরে। গ্রামটিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সবচেয়ে ভালো সময় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস। চাইলে সারাদিন ফুলের রাজ্যে কাটিয়ে দিতে পারেন। অনেকগুলো ফুলও কিনে আনতে পারবেন, দাম খুবই কম। সাদুল্লাহপুরে ৫০টি গোলাপ বিক্রি হয় ৮০-১০০ টাকায়।
সাদুল্লাহপুরের পাশেই বিরুলিয়া গ্রাম। এখানে পাবেন বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি। পুরোনো বাড়িগুলো তার মাটি সোঁদা গন্ধ আপনাকে ইতিহাসের খেরোখাতা খুলে দিবে চোখের সামনে। গ্রামের শেষ ঠিক মাথায় নদীর তীর ঘেঁষে বাড়িটি জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের। সেখানে এখন বাস করছেন রজনীকান্ত ঘোষের বংশধররা। সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন সহজেই!
মিরপুর ১ থেকে আলিফ কিংবা মোহনা বাসে উঠে সরাসরি বিরুলিয়া ব্রিজ যেতে পারেন। অথবা মিরপুর-১ এর কাছেই অবস্থিত দিয়াবাড়ি থেকে মিনিবাসে চড়তে পারেন। বেড়ীবাঁধের হাইওয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ এগোলেই বিরুলিয়া সেতু পরবে। বিরুলিয়া পোঁছালে আপনাকে পায়ে হেঁটে জমিদার বাড়িগুলো ঘুরে দেখতে হবে। আর গোলাপগ্রামে যেতে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে আক্রাইন বাজার। আক্রাইন বাজার থেকে অটোতে সাদুল্লাহপুর।