অতি নিকটের অতীতকেই যদি কাছে টেনে এনে জিজ্ঞাসা করি, আমরা সংশোধন হয়েছি বা হচ্ছি কি না, তবে উত্তর আসবে, সংশোধন নয় আমরা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আমরা কতটুকু লালন করছি তা ভেবে দেখার সময় এগিয়ে আসছে। ১৯৭১ সনে যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল ও পরে যারা রাষ্ট্রীয় খুন সন্ত্রাস এবং স্বৈরাচারের আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশকে শাষন করেছে, তাদের সঙ্গেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবীদাররা ক্ষমতার জন্য প্রকাশ্য বা গোপন সন্ধি করেছে। যে জামায়াতকে নিয়ে সকল দল একটি স্বৈরাচারকে বিদায় দিয়েছিল, সেই জামায়াত এখন তারাই পছন্দ করেন না। জামায়াত তো প্রকাশ্যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল, এটা জেনে শুনে বুঝে কেন তাদের সঙ্গে রাজনীতি করা হল? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে না কোন দিন কারণ রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রায় সবাই ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে।
সম্প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়নতার পাশাপাশি একটি জিনিস সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাজনীতি করেন তাদের ক্ষেত্রে এক ধরণের হিসেব। আর যারা সরাসরি রাজনীতি করেন না, ভাল কাজকে ভাল ও মন্দ কাজকে মন্দ বলেন, তাদের ক্ষেত্রেও হিসেবে প্রায় একই হচ্ছে। এটা নৈতিক অপরাধ। কারণ একটি স্বাধীন ও গনতান্ত্রিক দেশে সরকারের সমালোচনা হবে। আর সমালোচনা হলেই যে সরকার, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী মনে করে ফেলবে এটা অন্যায়।
এটি ষ্পষ্ট যে, দেশের সাধারণ মানুষ(আমজনতা) সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক। মালিক, কর্মচারীকে বা তাদের মনোনীত তত্ত্বাবধায়ককে ধমক দিতে পারবে না এটা ঠিক নয়। মালিক ধমক দিলেই শত্রু হয়ে যাবে এটা কুলক্ষন। এতে অধিকার নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। মালিকানা নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায়। কারণ যেখানে দখল আছে, সেখানে জবরদখলও থাকে। তাই সমালোচনার পথ বন্ধ হলে হারানোর আশংকা বেড়ে যায়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, রাজনীতিবিদ ছাড়াও লেখক সম্প্রদায়, মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, শিক্ষক, অভিনয় শিল্পী, খেলোয়ার সহ অরাজনৈতিক বলয়গুলোও এখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে বা হতে হচ্ছে বা হয়ে যাচ্ছে। আর যারা সাদাকে সাদা ও কালোকে কাল বলছেন তারাও সময়ের গেঁড়াকলে পড়ে রাজনীতির শিকার হচ্ছেন।
অবস্থাটা এমন হয়েছে যে, সরকারী দলের পক্ষে কথা না বললে তিনি বিরোধী দল হয়ে যান আর এই কারণে মৃত্যুর পরও তাকে প্রাপ্য সম্মান দেয়া হয় না। মত আর পথ যদি এক না হয়, তবে তিনি বিরোধী বলে আখ্যায়িত হন, এটিই বাস্তবতা। ফলে সরকারগুলো বস্তুনিষ্ঠু সমালোচনাকেও বিরোধীতা মনে করে। এটা গুরুতর ভুল। এতে মনের সাদা জায়গাটা কালো হয়ে যেতে থাকে। আর মানুষও সংকীর্ণ মনের মানুষ হয়ে উঠতে থাকে। পুরো মন সাদা থেকে কালো হয়ে গেলে মানুষ অহংকারী হয়ে উগ্র হয়ে যায় আর মৌলিক ও মানবিক অধিকার রিমান্ডে চলে গিয়ে বিপদের আশংকা তৈরী করে।
সুতরাং ইতিহাস তৈরী করতে গিয়ে এমন ইতিহাস যেন তৈরী করা না হয়, যে ইতিহাসে লেখক নিজেই খলনায়ক হয়ে না পড়েন। তাই এখনো সময় আছে সংশোধন হয়ে না থাকলে বড় মনের পরিচয় দিয়ে সংশোধন হওয়ার। আর জাতিও সেটাই আশা করে।