শেখ মামুন, রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃইতিহাস আর ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বা বিভিন্ন জায়গার নাম যেমন বিখ্যাত,তেমনি বিশেষ কিছু কারনেই কিছু কিছু জায়গারও রয়েছে সুখ্যাতি, তেমনি রয়েছে ঐতিহাসিক ভাবে স্বীকৃতি।যেমন কিছু বিখ্যাত ব্যক্তির নামে একটি এলাকা বা জেলার নাম করণ,কোনো বস্তুর জন্যে কোনো এলাকারও রয়েছে সুনাম ও সুখ্যাতি, বিশেষ কোনো বিষয়ের জন্য এসকল নামকরণ ইতিহাস ঐতিহ্যেরই সাক্ষ্য বহন করে।রাজবাড়ীও তার ব্যতিক্রম নয়।রাজবাড়ী জেলার রাজা সূর্য সেনের নামে রাজবাড়ী জেলার নাম করণ।
তবে রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাস ঐতিহ্যের বিভিন্ন সাক্ষ্য, কেউ জানে আবার কেউ হয়তো তার খোঁজও রাখেনা।এমনি একটা বিষয় হচ্ছে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দক্ষিনবাড়ী গ্রামের কালীবাড়ি বিলপাড়ে কালিঘরের পাশে শতবর্ষী এই “তমাল গাছটি”নির্জনে নিবৃতে কাটিয়েছে দুইশত বছরেরও বেশি সময়, যার খবর কেউ জানে আবার কেউ তার হদিসও রাখেনি।এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেলো তার কিছু ইতিহাস,আঃ খালেক তাদেরই একজন তিনি জানান আমার বাবা প্রায় একশত বছর বয়সে মারা গেছেন, তিনি মারা যাওয়ার পূর্বে এই গাছটি সম্পর্কে বলতেন ছোট বেলা থেকে তিনি এই গাছটা দেখে এসেছেন ঠিক একই রকম ঠিক এখন যেমন আছে।তাদেরই আরেক জন আকরাম শেখ জানান আমার পিতার মৃত্যুর আগে তার মুখে শুনেছি আমার দাদার বরাত দিয়ে বাবা প্রায়শই ওই গাছটা সম্পর্কে কথা ঊঠালেই তিনিও বলতেন আমার ছোট বেলা থেকেই কালিঘরে পূজাপার্বণ দেখতে যেতাম আর সেখানে ওই তমাল গাছটি দেখতাম সেই অবিকল এখন যেমন যতো বড় দেখছি। গাছটির উউচ্চতা প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ ফিট হবে।এতেই অনুমান করা যায় গাছটির বয়স কতো হহতে পারে।তমাল গাছ মুলত পত্রঝড়া গাছ, জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে গাছটির পাতা ঝড়ে যায়,এতে মনে হয় গাছটি মারা গেছে, কিন্ত মার্চের মধ্যেই নতুন পত্র পল্লবে আবার নতুন করে যৌবন ফিরে পায় গাছটি।এখানে যে কালীঘরটি রয়েছে সেটা বহুত পুরনো,হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখানে বহুকাল আগে একটি কালীন্দির তৈরি করে পুজা অর্চনা করতো,যার জন্য ওই এলাকা কালীবাড়ি নামে পরিচিত।বহুদিন আগে কালিঘরে আগুন লেগে কালীঘরটি পুড়ে গেলে কালী মুর্তিটি কালিঘরের মধ্যে সমাহিত করে ঘরটি পুনরায় সংস্কার করা হয়।সেটাও কালের আবর্তে জরাজীর্ণ হয়ে পরলে ঘড়টির তালা ভেংগে দুর্বৃত্তরা মন্দিরের মধ্যে থাকা বহু মুল্যবান সম্পদ চুরি করে নিয়ে যায়। বর্তমানে ঘড়টি সংস্কার হলেও নেই কোনো সংরক্ষণের ব্যবস্থা,সেখানে যাতায়াতের জন্য নেই কোনো ভালো রাস্তা,আধুনিকতার ছোঁওয়া তো দুরের কথা দিনে দুপুরে একা গেলেও ভয়ে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে,রাতের আঁধারে তো কথাই নেই,সেখানে নেই কোনো বিদ্যুতের ব্যবস্থা।এখানে এলে মনে হবে শত সহস্র বর্ষকাল পেছনে পরে আছে এখানকার সংষ্কৃতি।কালীবাড়ি কিম্বা কালিঘরকে ঘিরে নেই কোনো কারও আগ্রহ।এই কালিঘরের পাশেই রয়েছে এই তমাল গাছটি, হিন্দু সমাজে অনেক কথাই রয়েছে তমাল গাছকে ঘিরে।তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে তাদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণ তমাল গাছে বসে বাঁশি বাজাতেন, সেজন্যই তারা উপসানালয়ের পাশেই তমাল গাছ লাগাতো।বাংলাদেশে যত্রতত্র তমাল গাছের দেখা মেলেনা, তবে ঢাকা মীরপুর বুটানিক্যাল গার্ডেন-এ কিছু গাছ সংরক্ষণ করা আছে।বাংলাদেশে তমাল একটি মহাবিপন্ন (critically endangered) দেশীয় প্রজাতির বিরল গাছ।২০১২ সালের প্রণীত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে “তমাল” গাছ রক্ষিত উদ্ভিদ(protected plant) হিসেবে বিবেচিত।