ঢাকা: ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
সরেজমিন তদন্ত শেষে প্রাথমিকভাবে এমন রিপোর্ট দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দলের প্রধান ও জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টার অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বৃহস্পতিবার বলেন, তুর্কী গোয়েন্দাদের হাতে থাকা খাশোগি হত্যার রক্ত হিম করে দেয়া ভয়ঙ্কর রেকর্ডিং তারা শুনেছেন। ক্যালামার্ড সম্প্রতি ইস্তাম্বুলের ওই দূতাবাসও পরিদর্শন করেছেন। সব মিলিয়ে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা মনে করেন, সৌদি আরবের কর্মকর্তারা সুপরিকল্পিতভাবেই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সৌদি সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগি গত বছরের ২রা অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন। তখন সৌদি আরব তার নিখোঁজের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বাীকার করে। বরং দাবি করে, খাশোগি খানিক বাদেই দূতাবাস ছেড়ে গেছেন।
কিন্তু তুরস্কের কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে রোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসে। তোলপাড় সৃষ্টি হয় বিশ্বজুড়ে। অবশেষে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। তবে এটাকে বাকবিতন্ডা থেকে সৃষ্ট ভুল বুঝাবুঝির ফল বলে উল্লেখ করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
জাতিসংঘের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তুরস্কের তদন্ত কার্যক্রম সৌদি আরব বাধা দেয়ার সব ধরনের চেষ্টা করেছে। এই বাধা সৃষ্টির বিষয়টিকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যার ঘটনার যখন ১৩ দিন, তখনও তুরস্কের তদন্তকারি কর্মকর্তাদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এভাবেই বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল ।
এরপরও তুরস্ক সাংবাদিক খাসোগিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার তথ্য বের করেছিল। সেই প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় সৌদি আরব ১১জনকে বিচারের মুখোমুখি করেছে। তাদের পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড চাওয়া হচ্ছে। সৌদি কর্মকর্তারা বলে আসছেন, সৌদি আরবের একটি দুর্বৃত্ত দলের হাতে এই সাংবাদিক খুন হন। ঘটনার সাথে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের স¤পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
জাতিসংঘের তদন্ত কমিটির প্রধান অ্যাগনেস ক্ল্যামারড তদন্তের জন্য গত ২৮শে জানুয়ারি থেকে ৩রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তুরস্ক সফর করেছেন। তিনি তদন্তে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টির প্রচেষ্টার কড়া সমালোচনা করেছেন। একইসাথে সৌদি আরবে ১১জনকে বিচারের মুখোমুখি করার যে কথা বলা হচ্ছে, সেই বিচারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তবে খাসোগির মৃতদেহর খোঁজ এখনও মেলেনি। আগামী জুন মাসে জাতিসংঘের এই তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে।