আবু বক্কর সিদ্দিক সুমনঃ টঙ্গী থেকে ফিরে : পবিত্র হজের পর বিশ্ব মুসলিম জাহানের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বিশ্বইজতেমা রাজধানীর উপকন্ঠে গাজীপুর মহানগরী শিল্পনগরী টঙ্গী তুরাগ নদীর সুবিশাল তীরে আগামী আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। চলতি বছরের বিশ্বইজতেমা ৪ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। এটি ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। বিশ্বতাবলিগ জামাত এই বিশ্বইজতেমার আয়োজন করে। এটি হলো ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা আসর।
এদিকে, গাজীপুর মহানগরী সোনাবান বিবি’র টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে ৫৪তম বিশ্বইজতেমার মাঠ প্রস্তুতির কাজ বুধবার বিকেল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেশ জোরেসোরে শুরু করে দিয়েছে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আয়োজক কমিটির দু’পক্ষ। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ১০টি শর্ত মেনে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতি কাজ শুরু করেছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গী বিশ্বইজতেমার মাঠ সরেজমিনে ঘুরে ও মাঠের উন্নয়ন কাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের সাথে আলাপকালে তারা “গ্রাম বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম” এর প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছরের ৫৪তম বিশ্বইজতেমাকে ঘিরে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হলেও দু’পক্ষের অভ্যন্তরিণ কোন্দলের কারণে কোন পক্ষই ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি কাজে অংশ গ্রহণ করেনি। প্রতি বছর ইজতেমা অনুষ্ঠানের ৩ মাস আগে থেকে মাঠের প্রস্ততি কাজ শুরু করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর মাত্র ৮ দিন আগে ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতির কাজ শুরু করা হল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মুসল্লি জানান, চলতি বছরের বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে মাঠ প্রস্তুতির কাজ বেশ জোরেসোরে করা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পেশায় কর্মরত যুবক,ছাত্র,শিক্ষক ও বিভিন্ন জামাতে অংশ নেয়া ধর্মপ্রাণ শত শত মুসল্লিরা মাঠ প্রস্তুতিমূলক কাজে বিনাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া ইজতেমা মাঠের বিদেশী নিবাসের প্রবেশ গেইট সহ ১৭টি প্রবেশ গেইটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এসব স্থানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ইজতেমার মুরুব্বিদেরকে আজ বৃহস্পতিবার পাহারা দিতে দেখা গেছে। টঙ্গী পূর্ব মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কামাল হোসেন আজ বৃহস্পতিবার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ওসি “গ্রাম বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম” এর প্রতিবেদককে জানান, বুধবার বিকেলে টঙ্গী ইজতেমা মাঠে ইাজতেমা সংক্রান্তে ত্রিপক্ষীয় এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় এমপি আলহাজ মো: জাহিদ আহসান রাসেলের নেতৃত্বে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের মুরুব্বী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ এডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ কমিশনার ওয়াইএম বেলালুর রহমান, তাবলিগ জামাতের মুরুব্বী মাওলানা (জোবায়ের পন্থী), ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মাহফুজুর রহমান, মুফতী নেছার উদ্দিন, মুফতি নূরুল ইসলাম, মোস্তফা, সা’দপন্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইঞ্জিনিয়ার মুহিবুল্লাহ, হাজী মোহাম্মদ হোসেন, হারুন অর রশিদ, শহীদ উল্লা, মনির হোসেন, মুফতী ফয়সাল ও আতাউল্লাহ।
দুই পক্ষকে নিয়ে দুইঘণ্টা ব্যাপী আলোচনা শেষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মো: জাহিদ আহসান ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি কাজের উদ্বোধন করেন।
বৈঠক শেষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মো: জাহিদ আহসান রাসেল ইজতেমা মাঠে নেয়া সিদ্ধান্ত গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরেন। সিদ্ধান্ত গুলোর মধ্যে রয়েছে ১। আগামী ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা শুরু করে ১৬ ফেব্রুয়ারি মাগরিবের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ করে চলে যাবেন। ২। মাওলানা সা’দ অনুসারীগণ ১৭ ফেবুয়ারি ফজরের নামাজের পর ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করবেন এবং ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সা’দপন্থী ওয়াসিফুল ইসলাম অনুসারীগণ ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে তাদের দুইদিনের ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ৩। মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা বুধবার থেকে ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতি কাজ শুরু করবেন। ৪। মাওলানা জোবায়ের পন্থীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব আখেরি মোনাজাত শেষ করে মাঠ ছেড়ে চলে যাবেন। ৫। জোবায়ের পন্থী লোকজন প্রশাসনের উপস্থিতিতে সা’দ পন্থীদের কাছে মাঠ বুঝিয়ে দেবেন। ৬। দুই পক্ষের ইজতেমা শেষে ইজতেমা মাঠের প্রস্ততি কাজে লাগানো সরঞ্জামাদীর বিষয়ে দুই পক্ষের মুরুব্বীরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। ৭। ইজতেমা শেষে ময়দানে মুসল্লিদের ব্যক্তিগত মালামাল ছাড়া বাকি সকল মালামাল স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবে। ৮। মাওলানা জোবায়ের অনুসারী বিদেশি মেহমানরা দুইদিন ইজতেমা শেষে উত্তরা হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করবেন। ৯। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা সা’দ বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন না। ১০। ইজতেমা চলাকালীন উভয় পক্ষের তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিরা টঙ্গীর আশপাশ এলাকার মসজিদে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন।
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে বিশ্ব ইজতেমার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাবলিগ জামাতের দুটি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ সাংবাদিকদেরকে বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আগতদের জন্য নজীরবিহীন ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে সরকার। প্রয়োজনে সেনবাহিনীর সদস্যরা ইজতেমা ময়দানে থাকবেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেন, তাবলিগ জামাতের দু’টি গ্রপের মধ্যে সম্প্রতি রক্তক্ষয়ী যে সংঘর্ষ হয় সে ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। সরকার ইজতেমার ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু ইজতেমাটি যেন নির্বিঘ্নে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সে লক্ষ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। (ছবি আছে)