কলকাতা: সারদা ও রোজভ্যালি দুর্নীতির ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের জেরা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের রাজনীতি। রাজীবের জেরা নিয়ে সিবিআইয়ের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাত থেকে কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে অবস্থান ধর্মঘট করছেন কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ও অন্যরা।
অবস্থান ধর্মঘট থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন মমতা।
গতকাল বিকেলে লাউডন স্ট্রিটে জেরার জন্য রাজীব কুমারের বাসভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে সিবিআই। পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সিবিআইয়ের কর্মকর্তাদের পুলিশ গাড়িতে তুলে শেক্সপিয়ার অ্যাভিনিউ থানায় নিয়ে যায়। সিবিআইয়ের ডিএসপি তথাগত বর্ধনকে আটক করা হয়। ঘটনা শুনে কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ছুটে যান রাজীব কুমারের বাসভবনে।
ক্ষুব্ধ মমতা রাতেই কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফরহাদ হাকিম। এখান থেকে মমতা ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের’ ডাক দেন। বলেন, আজ সোমবার থেকে সিবিআই-বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আজ বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত তৃণমূলের কর্মী–সমর্থকেরা রাজ্যের শহর-গ্রামে আন্দোলন, প্রতিবাদ সমাবেশ, মিটিং–মিছিল করবেন। গতকাল রাতেই তৃণমূল–সমর্থকেরা হুগলির রিষড়া স্টেশন অবরোধ করেন। বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন।
যুব কংগ্রেসের নেতা থাকাকালে মমতা ১৯৯৩ সালে পুলিশি নির্যাতন এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদে মেট্রো চ্যানেলে ২৩ দিন অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন। ২০০৬ সালে সিঙ্গুর আন্দোলনে নিহত তাপসী মালিকের হত্যার প্রতিবাদে এবং সিবিআই তদন্তের দাবিতে তিনি মেট্রো চ্যানেলে ২৭ দিন অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন। মমতা বলেন, আজ মেট্রো চ্যানেলে তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকও করবেন।
পুলিশ গতকাল রাতেই শেক্সপিয়ার সরণি থানা থেকে আটক সিবিআই কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় সিবিআইতে ক্ষোভ জন্মায়। গতকাল রাতেই কলকাতার সিবিআই দপ্তরের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফ নিয়োগ করা হয়েছে। সিবিআই কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে আজ ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। কলকাতার পুলিশও এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি ঘটনা জানতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালককে তলব করেছেন।
গতকাল রাতে মমতাকে ফোন করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘এই লড়াই আমাদের সবার লড়াই। আমি আপনার পাশে আছি। যেকোনো মূল্যে মোদি সরকারের আগ্রাসনকে রুখতে হবে।’
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মমতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব প্রমুখ। তাঁরা বলেন, মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলনে তাঁরা মমতার পাশে আছেন এবং থাকবেন।