নূর হোসেনের নামে চিঠি : ‘বড় ভাইয়ের পরিকল্পনায় ৭ খুন’

Slider খেলা গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ঢাকা নারী ও শিশু ফুলজান বিবির বাংলা রাজনীতি সারাদেশ সারাবিশ্ব

45674_samim and noor
নারায়ণগঞ্জ  সংবাদদাতা
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
নারায়ণগঞ্জ: বহুল আলোচিত সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস কাবে এ চিঠিতে এসে পৌছায়। চিঠির শেষে নূর হোসেনের নাম ও স্বাক্ষর থাকলেও এটা আদৌ নূর হোসেনের কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে চিঠির মধ্যে সেভেন মার্ডারের ঘটনার জন্য ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়া চাকুরীচ্যুত র‌্যাব কর্মকর্তা অবসরে পাঠানো সেনাবাহিনীর মেজর আরিফ হোসেন ও নৌ বাহিনীর লে. কমান্ডার এম এম রানাকে দোষারোপ করা হয়েছে।

চিঠিতে প্রেরকের ঠিকানা হিসেবে ইংরেজিতে সুব্রত পোদ্দার, লিলিপোট ফ্যাশন হাউজ, ১২/এ, মারকুইজ স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০১৬, ইন্ডিয়া লেখা রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রেস কাবের সভাপতি হালিম আজাদ চিঠির সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, চিঠিটি আদৌ নূর হোসেনের কিনা সেটা আমরা নিশ্চিত না। বিষয়টি পুলিশের কাছে জানানো হয়েছে। এটা যাচাই করা উচিত। এদিকে চিঠিটি নিয়ে শহর জুড়ে তোলপাড় হচ্ছে।

চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
তারিখ ৩১/০৫/২০১৪ ইং

প্রিয় নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জবাসি।
আমার সালাম নিবেন। আমি লেখাপড়া না জানা একজন সাধারন মানুষ। আমার চাওয়ার চেয়ে পাওয়াটা ছিল অত্যন্ত বেশি। তাই অহমিকা ও মূর্খতার কারণে আজ এ পরিস্থিতি। সিদ্ধিরগঞ্জ হারিয়েছে সাতটি তাজা প্রাণ। আর আমি হয়েছি দেশছাড়া।

আপনারা নিশ্চই অবগত আছেন নজরুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হতে শুরু করে বহুদিন যাবৎ আমার সকল কাজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিরোধীতা করে আসছিলো। তখন থেকেই সে আমার প্রকাশ্য শক্রুতে পরিণত হয়। সে আমাকে হত্যার জন্য একবার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়া গুলি করায়। আমি মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যাই। তদুপরি সে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতেই থাকে। সরকার ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সাথে আমার সম্পর্ক তেমন ভালো না থাকার সুযোগে গত কিছুদিন যাবৎ আমার প্রতিবেশী নজরুল ও মনির নিহত নজরুলের সহযোগিতায় আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ঢাকার একটি কিলার গ্রুপ এর সাথে এক কোটি টাকা চুক্তি করেন।

চুক্তি মোতাবেক আমাকে যাত্রাবাড়ি ফাইওভারের ওপরে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করে। আমি বিষয়টি টের পাইয়া প্রাণে রক্ষা পাই। পূর্বেও তারা আমাকে হত্যার জন্য অপহরণ করেন। আমি সেখান থেকে টাকার বিনিময়ে রক্ষা পাই। নজরুল ইসলামের সাথে তৎকালীন সাংসদ কায়সার হাসনাত, সিটি মেয়র আইভী, এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় নজরুল চিটাগাং রোডে সড়ক ও জনপথের অফিসে, পাওয়ার হাইজ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আদমজী ইপিজেড, চিটাগাং রোড ট্রাক টার্মিনাল এবং সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কাজ এককভাবে নিয়ন্ত্রনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। তাছাড়াও আমার ব্যাক্তিগত বিভিন্ন ব্যবসায় বিভিন্নভাবে বাঁধা ও হয়রানী করতে থাকে। এমনকি আমার প্রাণনাশেরও চেষ্টা করিতে থাকায় আমি নিরুপায় হয়ে বিষয়টি বড় ভাইকে জানাই। তিনি আমাকে তাকে পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। আমি বিষয়টি নিয়ে মেজর আরিফের সাথে কথা বলিলে তিনি আমার থেকে বড় ভাইয়ের সম্মতি আছে কিনা জানতে চান। আমি হা বলিলে তিনি এর সাথে কথা বলে আমাকে জানাবেন বলে জানান। আমি মেজর আরিফকে নিয়ে একদিন রাতে বড় ভাইয়ের কাছে গেলে তিনি সম্মতি দেন এবং ইসমাইলের বিষয়েও কথা বলেন। ইসমাইলের  বিষয়ে মতি আমার মাধ্যমে ৫০ লক্ষ টাকা দেন। ইসমাইলের কাজটি সমাধানের পর নজরুলের কাজটা নিয়ে মেজর আরিফ ও রানা, তারেক সাহেবের সাথে কথা বলে ১ কোটি দাবী করলে আমরা সম্মত হই। ১৫/২০ দিন পর মেজর আরিফ আবার আমার কাছে ২ কোটি দাবী করে বলেন তাকে একা পাওয়া যাবেনা। দুইজনকে কাজ ( মানে হত্যা ) করতে হবে। উপরে ১ কোটি টাকা লাগবে। তাই মোট দুই কোটি টাকা লাগবে। আমি বড় ভাইকে বিষয়টি জানাইলে তিনি আমাকে এক কোটি, মতিকে ৫০ লক্ষ আর ইয়াসিনকে ৫০ লক্ষ টাকা দিতে বলেন। বিনিময়ে আমাকে বালু ও ট্রাক স্ট্যান্ড, ইয়াসিনকে সড়ক জনপথ ও পাওয়ার হাউজ আর মতিকে ইপিজেড ও তেলের ডিপো এবং মজিবর রহমানসহ অন্যান্যদের জন্য ইজারাকৃত বিভিন্ন পার্কিং টোল ভাগাভাগি করে দেন। মজিবর ভাইকে আমাদের সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেন। কাজটি করার জন্য নজরুলের গতিবিধি দেখাশুনার জন্য আমাকে ও মতিকে দায়িত্ব দেন মেজর আরিফ। একবার যাত্রাবাড়ি, একবার সাইনবোর্ড ও আরেকবার মিজমিজি এলাকায় কাজের (হত্যার) পরিকল্পনা ব্যার্থ হওয়ায় আমরা নিরাশ হই। এরপর বড় ভাই আমাকে জানায় সাতাশ তারিখে সে কোর্টে আসিবে এবং কোর্ট থেকে বাহির হইলে যেন কাজটি করি। সেই মোতাবেক আমি আরিফ সাহেবকে বলিলে আরিফ সাহেব তার দলবল নিয়া দশজন এই কাজে রওনা হন এবং কোর্ট এলাকায় দুইজন সোর্স নিযুক্ত করেন। মতিও তার সোর্স পাঠিয়ে নজরুলের কোর্টে থাকা নিশ্চিত ও তাকে সনাক্ত করানোর কাজটা করান। আমি ও র‌্যাব এর সাথে থাকা আমার লোক শাহজাহানের মাধ্যমে র‌্যাব এর কাজকর্ম তদারকি করি। বেলা ১টা ৪৫ টায় র‌্যাবের সদস্যরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে আসে। পরে জানতে পারলাম মোট সাতজনকে র‌্যাব উঠিয়ে আনে। র‌্যাব পরিস্থিতি বুঝেশুনে কাজ করার জন্য তাদেরকে অজ্ঞান করে তাদের হেফাজতে রাখেন। এরপর একই দিন রাত ২টা ৩০ মিনিটে তাদের হত্যা করা হয় বলে আরিফ ও রানা আমাকে জানায়। আমি সাতজন হত্যা হোক এটা কখনও চাইনি। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এ কাজটা তারা করেন। এ কারনে আমি বড় ভাইকে বলি এত বড় কাজটি আমি করিনি। কি কারনে কার নির্দেশে র‌্যাব এত বড় কাজটি করলো তা আমার জানা নেই। এরপর আমি বড় ভাইয়ের নির্দেশে ভারতে চলে আসি। নারায়ণগঞ্জবাসির জানা একান্ত প্রয়োজন মনে করে এই ঘটনাটি আমি জানাইলাম। কারণ আমাকে যেকোন সময় হত্যা করিতে পারে। সেক্ষেত্রে পুরো ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জবাসির নিকট অজানা থাকিয়া যাইবে আর বিনা দোষে অনেকে শাস্তিভোগ করিবে। আমার এই কাজের কোন ক্ষমা নাই তবুও আমি নারায়ণগঞ্জবাসি তথা সিদ্ধিরগঞ্জবাসির নিকট ক্ষমা প্রার্থী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *