গাজীপুর: অপরিচ্ছন্ন ও দালালীর অভিযোগে অভিযুক্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেহারা এক মাসের মধ্যেই পরিবর্তন করে ফেলেছেন নতুন পরিচালক ও গাজীপুরের মেধাবী ছেলে ডা. মো.আমীর হোসাইন রাহাত। নিজ জেলার প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি রীতিমত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অতিরিক্ত পরিশ্রম করে হাসপাতালটির অতীত চেহারা পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন করে অনেক উন্নতি করেছেন। এতে হাসপাতালের সার্বিক পরিবেশে আমুল পরিবর্তন এসেছে।?
সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের সিঁড়িগুলো পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন। সেবা গ্রহনকারীরা বলছেন, হাসপাতাল এখন আগের তুলনায় অনেক বেশী পরিচ্ছন্ন। দালালদের দৌরাত্ম্য অনেক কমেছে। এখন রাতের বেলায়ও অপারেশন হয়।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো.আমীর হোসাইন রাহাত জানান, বহুতল ভবন নির্মান শেষ হলে আর রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হতে হবে কম। ৫০০ বেডের এই হাসপাতালটির সকল বেডও চালু হবে তখন। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে জানিয়ে পরিচালক বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল, যন্ত্রপাতি,যানবাহন ও আবাসন সমস্যার সমাধান হলেই আরো উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত সম্ভব।
যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার পরিচালকের জন্য একটি গাড়িও কেন নেই, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংকটগুলো মন্ত্রানালয়কে জানানো হয়েছে। আশা করি অচিরেই সমাধান হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন,বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের নামে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের মধ্যে চিকিৎসা সেবায় যেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জন্ম থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বেড়ে উঠা এই মেথাবী ও খ্যাতিমান চিকিৎসক দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ইনশাল্লাহ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দেশের মধ্যে একটি আধুনিক ও উন্নত হাসপাতালে পরিনত করতে শত বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার কন্যার নির্দেশে বাংলাদেশ চিকিৎসা সেবায় উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় থাকবে বলে আশাবাদী তিনি।
গাজীপুরের মেধাবী সন্তান ডা: রাহাতের পরিচয়
———————————-
ডা. মো.আমীর হোসাইন রাহাত গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ খাইলকুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের কিছুদিন পরেই তার পরিবার স্থায়ী আবাস গড়েন সদর উপজেলার সাবেক গাছা ইউনিয়নের আরেক গ্রাম কামারজুরীতে।
শৈশবে তিনি লেখাপড়া করেন জাঝর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক বৃত্তি নিয়ে পাশ করে কামারজুরী ইউসুফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং এসএসসিতে স্টার মার্কস নিয়ে পাশ করে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজে ভর্তি হন তিনি। ভাওয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও ছাত্র সংসদের সদস্য, আপ্যায়ন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৩ সালা ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি পদে মনোনীত হন কিন্তু তৎকালীন সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সহিংসতায় নির্বাচন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সেই সময়ের কলেজ প্রশাসন।
এমবিবিএস পাশ করার পরই তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ( স্বাচিপ) এর ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোনীত হন। তারপর গাজীপুর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া তিনি গাজীপুর জেলা বিএমএ র সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা ডা. রাহাত বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ গাজীপুর জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ গাজীপুর জেলা শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমান সহসভাপতি ডা. রাহাত অনেক সংগঠনের সাথে জড়িত।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ সাল থেকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ( স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এনেসথেসিওলজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠান কাল থেকে দায়িত্ব পালন করার পর গত ১ জানুয়ারী ২০১৯ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রালয়ের এক আদেশে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হিসাবে গত ২ জানুয়ারী যোগদান করেন তিনি।