ঢাকা: তখনও যান্ত্রিক নগরে শুরু হয়নি জনসমাগম বা অধিক মানুষের চলাচল। সবে ভোর পার হয়ে সকাল হওয়ার পথে। রুটি-রুজির সন্ধানে কিছু মানুষ ঘর থেকে বের হলেও হাতেগোনা তার সংখ্যা।
ব্যস্ত রাজধানীর কলরব ছড়াতে এখনও আছে বেশ দেরি, সবে সকাল সাড়ে ৫টা। যারা রাত্রিকালীন ডিউটিতে নিয়োজিত তারাও আছেন কর্মস্থলে। সকালে ডিউটিতে বের হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেউ কেউ। যাদের কর্মস্থল দূরে তারাই কেবল বের হয়েছেন রাস্তায়। অপেক্ষায় আছেন কখন পাবলিক পরিবহন আসবে। রাত্রিকালীন ডিউটিতে যেসব পুলিশ নিয়োজিত ছিলেন তারাও ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। তবুও থেমে নাই তাদের জনসেবা।
ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার তাপস কুমার দাস ছিলেন গুলশান এলাকার রাত্রিকালীন পুলিশের ডিউটি তদারকীতে। সারারাত পুলিশের ডিউটি তদারকী করে এসময় ক্লান্ত চোখে পার হচ্ছিলেন মহাখালী এলাকার আমতলী মোড়। উদ্দেশ্য গুলশান এক নম্বর এলাকায় যাবেন ডিউটি তদারকীতে। এমন সময় এক মহিলার চিৎকার ভেসে আসে কানে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে আসেন আমতলী বাসস্ট্যান্ডে। গাড়ি রেখেই দেহরক্ষী ও ড্রাইভারসহ নিজে দৌঁড়ে যান সেখানে। তখনও এক দুস্কৃতিকারী লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করছে মেয়েটিকে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুস্কৃতিকারী দৌঁড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশও তার পিছু নেয়। অনেকটা পথ দৌঁড়ে তারপর আটক করেন দুস্কৃতিকারীকে।
এরপরের গল্পটা অন্যরকম। ধৃত ব্যক্তিসহ পুলিশ ফিরে আসেন ভিকটিম মহিলার কাছে। মহিলার ঠোট দিয়ে অনবরত ঝরছে রক্তের ধারা। শরীরের আরও কয়েক স্থান হয়েছে আহত। তাদের দ’ুজনের মধ্যে নেই পূর্ব পরিচিতি। তারা কেউ কাউকে চিনেও না। তবে কেন এই আক্রমন? এমন প্রশ্নের উত্তর শুনতে প্রস্তুত ছিল না উপস্থিত কেউ। ¯িœগ্ধ ভোরে ভিকটিমকে একা পেয়ে কু-প্রস্তাব দেয় ধৃত ব্যক্তি আলমগীর। কিন্তু নারী নিরাপত্তা কর্মী তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে চরম প্রতিবাদ জানায়। তখন আলমগীর প্রথমে মহিলার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। প্রতিবাদ করার কিল-ঘুষি মেরে পরে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেয়েটিকে। সবই ঘটে প্রকাশ্য বাসস্ট্যান্ডে। একটি টিভি চ্যানেলের ওই নিরাপত্তা কর্মী তার অফিসের গাড়ি মিস করায় ডিউটিতে যেতে একাই অপেক্ষায় ছিলেন সেখানে বাসের জন্য। আর এ সুযোগে কড়াইল বস্তি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী আলমগীর মেয়েটিকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। রক্তক্ষরণের কারণে অসুস্থ নারী নিরাপত্তা কর্মীকে পুলিশ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। আটক আলমগীরকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বনানী থানায়। নারী নিরাপত্তা কর্মীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ সকালেই বনানী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রুজু হয়েছে মামলা।
এমন নারী নিরাপত্তা কর্মীসহ নারী কর্মজীবিদের জননিরাপত্তা দিতে পুলিশের চেষ্টার কমতি নেই কখনও। রাত-দিন, সকাল-সন্ধ্যা, সবসময় পুলিশ আছে আপনার পাশে। যে কারও বিপদে পুলিশের এমন সহায়তা আগেও ছিলো, এখনও আছে, আগামীতে আরও বেশি থাকবে। নারী নিরাপত্তা কর্মীকে রক্ষা এবং জড়িত আসামিকে তৎক্ষণাৎ আটক করার বিষয়টি ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন সুধী সমাজ ও সংশ্লিষ্টরা। ধন্যবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশদেরকে।