প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চায় গাজীপুরের এক কর্মজীবী নারী

Slider নারী ও শিশু


গাজীপুর: আদালত ও নির্বাহী বিভাগের আদেশ থাকা সত্ত্বেও নিজের পৈত্রিক ভিটা ও পারিবারিক কবরস্থান রক্ষা করতে গিয়ে একাধিকবার আক্রমনের শিকার এক কর্মজীবী নারী প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চেয়েছেন।

কর্মজীবী নারীর অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ জামায়াতের অর্থদাতা হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি আইনি সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

আদালতে একাধিক মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, অভিযোগকারী নারীর নাম মাকসুদা বেগম। তিনি একজন সরকারী কর্মচারী। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামে। ২০০৬ সালে তার পিতা আহাদ আলী মারা যায়। তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে শহরে চাকরি করছেন।

সম্প্রতি কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের রায়েদ গ্রামের ডা. রুহুল আমিন তার পৈত্রিক ভিটার কবরস্থানসহ জবর দখলের চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিলে রুহুল আমিনের লোকজন তাকে একাধিকার মারপিট করে হত্যার চেষ্টা করেন। এসব ঘটনায় তিনি থানায় গেলে পুলিশ তার অভিযোগ আমলে নেয়নি।

মাকসুদা বেগম জানায়, তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রুহুল আমিন তার বাবা ও মার নিকট থেকে জমি কিনেছেন মর্মে একাধিক জাল দলিল সৃষ্টি করে তার পৈত্রিক জমি দখলের চেষ্টা করছেন।

তিনি আরো বলেন, জাল দলিলগুলো সংগ্রহ করে তিনি আদালতে দলিল বাতিলের মামলা করেন (বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত (৩) গাজীপুর, দলির বাতিল মামলা নম্বর ৭৬/১৮)। কিন্তু সিভিল মামলা চলমান থাকা অবস্থায় রুহুল আমিন তার জমি দখলের চেষ্টা চালালে তিনি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করেন (বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত গাজীপুর পিটিশন মামলা নম্বর ১৪৯/১৮)। আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য নোটিশ জারী করেন।

এদিকে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রুহুল আমিনের সৃষ্ট দলিলের মাধ্যমে অর্জিত জমির নামজারী ও জমাভাগ করার জন্য খারিজের আবেদন করেন। মাকসুদা বেগম খোঁজ পেয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের নিকট বিচারাধীন মামলার নালিশি তপসিলের খারিজ না দেয়ার জন্য একটি আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন (গাজীপুর জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা স্মারক নং ০৫.৪১.৩৩০০.০০৯.০৯.১২২.১৬ (পার্ট-২)। কিন্তু এই নির্দেশ অমান্য করে তরগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার বাবুল মিয়া নালিশি তপসিলের খারিজ দিয়ে দেন (নামজারী ও জমাভাগ নথি নং-তরগাঁও ৪৪৫/১৮-১৯ ইং)।

এ বিষয়ে তরগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার বাবুল মিয়া বলেন, বিধি মোতাবেক নামজারি (খারিজ) দেওয়া হয়েছে। আইনের ব্যতয় ঘটেনি।

এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মাকসুদা বেগম আমার কাছে আসেনি।

এ বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করেও গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে ডা. রুহুল আমিন বলেন, আইন মোতাবেক নামজারি ও জমাভাগ হয়েছে। আইন অবমাননা করা হয়নি। ১৪৫ ধারার নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাওয়ার পর খারিজ পেয়েছি। জেলা প্রশাসকের আদেশের পূর্বে নামজারির আবেদক করা হয়েছিল। তাই লঙ্ঘন হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমি রাজনীতি করিনা। জামায়াত করলে সরকার আমাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে বিভাগীয় প্রধান করতেন না।

এমতাবস্থায় মাকসুদা বেগমের আবেদন, আইন আদালত উপেক্ষা করে বিবাদী তার লোকজন দিয়ে তাকে ও তার পরিবারের লোকজনকে হত্যা বা গুম করে তার পৈত্রিকভিটা ও পারিবারিক কবরস্থান জবর দখল করতে চায়। তিনি পরিবার পরিজনসহ সকলের জানমালের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিচার দাবী করেছেন।

সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম উভয় পক্ষকে তার অফিসে ডেকে এনে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *