ঢাকা: পাকিস্তানের পেশোয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে বর্বর জঙ্গি হামলায় ১৩২ শিশুসহ অন্তত ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালের এ হামলায় রাত ১০টার আগ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩২ শিশুসহ ১৪১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, আহত হয়েছে আরও শতাধিক শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী।
প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ডন অনলাইনের খবরে বলা হয়, হামলায় নিহত ১৪১ জনের মধ্যে ১৩২ জনই শিশু। এছাড়া, শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
তবে, বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা শিরিন মারাজি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১৪৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১৩ জন। নিহতদের মধ্যে ১৪০ জনই শিশু বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অবশ্য, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া দাবি করেছে, হামলায় ১৬০ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু হলেও সংখ্যা নির্ণয় করা হয়নি।
নিষ্ঠুর এ হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খাত্তাক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, হামলায় নিহতদের মধ্যে শতাধিক শিশু।
সকালে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, ৫-৬ জন অজ্ঞাত বন্দুকধারী পেশোয়ারের ওয়ারসাক রোডে আর্মি পাবলিক স্কুলে নামে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা চালায়। স্কুলটিতে অফিসার ও নন-কমিশনড সেনাদের সন্তানরা পড়াশোনা করে। এসব শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই বয়স ১০-১৮ বছরের মধ্যে।
ডন অনলাইনের প্রতিবেদক টিম ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যায় জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ছয় হামলাকারীই নিহত হওয়ায় সাত ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। আর কোনো হামলাকারী জীবিত নেই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিশ্চিত হয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে।
এর আগে, আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নিরাপত্তা বাহিনী ইতোমধ্যে ছয় সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। আর কোনো হামলাকারী বেঁচে আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অবশ্য আইএসপিআর’র বিবৃতির আগে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, হামলা চালিয়ে বেশ ক’জন জঙ্গি পালিয়ে গেছে।
এই হামলার কড়া নিন্দা এবং হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন।
অপরদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিক নির্দেশনা দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তালেবানের সঙ্গে সবরকমের সমঝোতা সংলাপও স্থগিত করে নওয়াজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় পেশোয়ারেই সকল দলের বৈঠকেরও (এপিসি) ডাক দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাদের সমাগম লক্ষ্য করে হামলে পড়ে বর্বর হামলাকারীরা।
এ হামলার দায় স্বীকার করে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা (সেনাবাহিনী) যেভাবে আমাদের সন্তান-পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে, আমরাও তাদের সন্তান-পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছি। এখন প্রিয়জন বিয়োগের ব্যথা তারাও বুঝুক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হত্যাযজ্ঞ নিশ্চিত হওয়ার আগে ঘটনাস্থল থেকে বোমা ও গুলির শব্দ শোনা যায়।
এনডিটিভি জানায়, জঙ্গিরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরে স্কুলের ভেতর প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকেই তারা নির্বিচারে গুলি করতে শুরু করে।
সাম্প্রতিককালে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযানে শত শত তালেবান নিহত হয়। জার্ব-ই-আজ নামের ওই অভিযানে কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০ তালেবান নিহত হয়।
সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, অভিযানে একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েই এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালালো তালেবান।
যদিও হামলার পাল্টা জবাবে সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ পেশোয়ারে পৌঁছে জানিয়েছেন, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। তার এ ঘোষণার পরপরই খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ১০টি বিমান হামলা চালানোর খবর পাওয়া যায়।
তালেবানি হত্যাযজ্ঞে বিধ্বস্ত পাকিস্তানে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।
এ হামলার প্রেক্ষিতে পেশোয়ারে ডাকা ১৮ ডিসেম্বরের বিক্ষোভ সমাবেশ স্থগিত করেছেন বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান।
একইসঙ্গে এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন পিটিআই’র সাবেক জ্যেষ্ঠ নেতা শাহ মাহমুদ কোরেশী।
হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে হতাহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ বিশ্ব নেতারা।
হামলার ঘটনায় নিজের হৃদয় ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন নোবেলজয়ী কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। – বাংলানিউজ