কাকিনায় জন সম্মুখে বাদুরের বস বাস

Slider রংপুর


হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজারের রেইনট্রি গাছটি এখন বাদুড়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

শত বছরের পুরানো এই গাছটি শুরু থেকেই বাদুড়ের বসবাস। গাছটিতে এখন বসবাস করছে অগণিত বাদুড়। এদের বসবাস, বিচরণ আর কিচিরমিচির শব্দে দিনরাত মুখরিত থাকে এলাকাটি।

সন্ধ্যায় বাদুড়ের ছোটাছুটিতে এলাকাটিতে সৃষ্টি হয় সৌন্দর্যের অবর্ণনীয় এক পরিবেশ।

আকাশের দিকে তাকালে এদিক সেদিক দেখা যায় উড়ন্ত বাদুড়ের দল। গোধুলী রক্তিম আকাশে শত শত বাদুড়ের ডানামেলা দৃশ্যে এলাকাটিকে মনে হয় প্রকৃতির এক অপার সৌর্ন্দযের বেলাভূমি।

খাদ্যের সন্ধানে পড়ন্ত বিকেলে উড়ে চলা বাদুড়গুলো দেখে মনে হয় আকাশ যেন কালো মেঘে ঢাকা। মনোরম এ দৃশ্য দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটে আসেন এখানে।

প্রাণী বিষেজ্ঞদের মতে, বাদুর গুহায় কিংবা অন্ধকার জায়গায় থাকে।

স্বচোখে দেখা মেলা অনেকটা ব্যতিক্রম। কিন্তু লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের রেইনট্রি গাছটিতে কয়েক শতাধিক বাদুড়ের বসবাস।

এ বাজারে সার্বক্ষণিক লোকজন থাকে। এ রাস্তা দিয়ে সব সময় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এত লোকের ভিড়েও প্রায় কয়েক যুগ ধরে বসবাস করে আসছে বাদুড়।

এরা সন্ধ্যায় দলে দলে বিভিন্ন দিকে বেরিয়ে যায় খাবারের খোঁজে। আবার রাত শেষে ভোরে ফিরে আসে একই স্থানে।

কিছুক্ষণ কিচমিচ শব্দ করে পা দিয়ে গাছের ডালে আঁকড়ে ধরে মাথা নিচে দিয়ে ঝুলে ঘুমিয়ে থাকে। দুপুরে দেখা যায় ডানা ছেড়ে হাত পাখার মতো বাতাস করে আর কিছুক্ষণ কিচমিচ শব্দ করে আবার স্থির হয়ে যায়।

এদের দেখে মনে হয় পোষা প্রাণীদের মতোই বসবাস করছে।

কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, ও রানু মিয়া জানান, বাদুর অবলা প্রাণী। এদের জীবনযাত্রা বড়ই উদ্ভট। নিজের খাদ্যের অভাব মেটানো ছাড়া কোনো ক্ষতি করে না।

সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ওরা দল বেঁধে ছুটে যায় খাবারের জন্য বিভিন্ন দিকে। রাতে খাবার অন্বেষণে গেলেও ভোরে সোজা চলে আসে বাদুড়ের আবাসস্থল গাছটিতে। এমনিভাবে চলছে যুগের পর যুগ বাদুড়দের জীবন।

ওই এলাকার স্কুল শিক্ষক শহীদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে কাকিনা বাজারের রেইনট্রি গাছটিতে বাদুড়গুলো আশ্রয় নিয়ে আসছে।

সারাদিন বাদুড়গুলো এই রেইনট্রি গাছেই থাকে। সন্ধ্যা হলেই খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

সারাদিন বাদুড়ের কিচিরমিচির শব্দে বাজারের চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে।

তবে বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাদুড়ের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমে এসেছে। বাদুড়ের সমাগম দেখতে প্রায় সময়ই লোকজনের ভিড় দেখা যায়। বাদুড় কোনো ক্ষতি করে না। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষগুলো যেন বাদুড়কে প্রকৃতির এক অপরূপ উপাদান হিসেবে মনে করছে।

ওই বাজারের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এক সময় সব ধরনের পাখি গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির গাছে বাসা বেঁধে নির্বিঘ্নে বসবাস করত। কালের আবর্তে যেন হারিয়ে গেছে সবকিছু।

গ্রামে এখন আর পাখির তেমন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এক সময় প্রতিদিন ভোরে গ্রামের গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর কলরবে ঘুম ভাঙত গ্রামবাসীর। আবার সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলিতে আনন্দ উপভোগ করতেন তারা। পাখি কলতান কাকিনা গ্রাম থেকে হারিয়ে গেলেও বাদুড়গুলো ওই গাছটিতে বসবাস করছে যুগের পর যুগ।

কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাদুড় এখানে থাকে। যদিও এরা পোষা প্রাণী নয় তবু এদের প্রতি আমি অনেকটা দুর্বল। এদের কোনো ক্ষতি হোক কিংবা এখান থেকে চলে যাক তা আমরা চাই না।

কেউ যাতে বাদুড়ের ক্ষতি করতে না পারে, এদিকে আমি সব সময় নজর রাখি ও আমি চাই এখানে আরো বাদুড়ের সমাগম ঘটুক। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক এসে এ দৃশ্য উপভোগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *