সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমায় রয়েছে কদমতলী বাস টার্মিনাল। এটি সিলেটের তো বটেই, পুরো বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল।
সিলেটের সঙ্গে গোটা বাংলাদেশের সড়ক পথে যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু এই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে রয়েছে নানান সমস্যা।
নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আচ্ছন্ন এই বাস টার্মিনালটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। এতে ব্যয় হবে ১১৭ কোটি টাকা।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৭ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠেছে কদমতলী বাস টার্মিনাল। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ দূরাপাল্লার বাস যাতায়াত করে। অভ্যন্তরীণ সড়কে এর দ্বিগুণ বাস চলাচল করে। কিন্তু সিলেট বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বাস টার্মিনালে রয়েছে নানা সমস্যা।
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হওয়া সত্ত্বেও এখানে যাত্রীদের জন্য নেই বসার কোনো সু-ব্যবস্থা। কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি নিজস্ব ব্যবস্থায় নিজেদের যাত্রীদের জন্য বসার ব্যবস্থা রাখলেও অন্য হাজারো যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ।
রোদ-বৃষ্টিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের। এছাড়া টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য নেই কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা। টার্মিনাল থেকে দূরে ভুতুড়ে পরিবেশে থাকা একটি নামকওয়াস্তে পাবলিক টয়লেট রয়েছে। কিন্তু এটি নোংরা, স্যাঁতস্যাঁতে; এমনকি টয়লেটের দরজাও নেই।
পুরো বাস টার্মিনালে যততত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় অবস্থা আরো শোচনীয় হয়েছে। টার্মিনালে অবৈধভাবে বসানো শতাধিক টং দোকানের ময়লা-আবর্জনা পাশেই ফেলে রাখা হয়। টার্মিনালের ধুলিমাখা নোংরা পরিবেশের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিও পৌঁছে চরমে।
এরকম অবস্থায় সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। গত বছরের জুন মাসে বিষয়টি জানিয়েছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু এরপর নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েক মাস সময় পেরিয়ে যায়।
সিসিক সূত্র জানিয়েছে, বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় দুটি কাজ করা হবে। এর একটি হচ্ছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ, অপরটি টার্মিনালের অবকাঠামোতগত উন্নয়ন। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য ৫৬ কোটি টাকা এবং টার্মিনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৬১ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
পুরো প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করে যায়। তখন প্রতিনিধি দল এই বছরের (২০১৯) ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরুর তাগিদ দেয়। অন্যথায় অর্থায়ন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দেয় তারা। বিশ্বব্যাংকের তাগিদের পরই বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন কাজ শুরুর প্রতি জোর দেয় সিসিক। সম্প্রতি কাজের জন্য দরপত্রও আহবান করা হয়। এতে কনকর্ড কনস্ট্রাকশন ও ঢালি কনস্ট্রাকশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান সিলেটভিউকে বলেন, বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন করতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড হবে, অবকাঠামোগত উন্নয়নও হবে। এ কাজে ১১৭ টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। কাজের দরপত্রে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তবে এখনও কাউকে কাজ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি, শিগগিরই হয়ে যাবে।
সিসিকের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কাজ দুটি ভাগে আর টার্মিনালের অবকাঠামোগত কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হবে। পুরো বাস টার্মিনালের ময়লা-আবর্জনা যাবে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেখানে ময়লা-আবর্জনাকে পরিশোধন করা হবে। সব প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করা হবে।
নুর আজিজুর রহমান আরও জানান, বাস টার্মিনালে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। যেখানে যাত্রীদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কক্ষ, টয়লেট, বিশুদ্ধ পানি প্রভৃতির ব্যবস্থা থাকবে।
আধুনিক টার্মিনালে প্রত্যেক রুটের জন্য আলাদা পার্কিং জোন, প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা রাস্তা থাকবে বলে জানা গেছে। টার্মিনালে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা দুর্ঘটনার শিকার কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে আলাদা কক্ষ থাকবে বলেও জানিয়েছে নুর আজিজুর রহমান। তবে এর জন্য চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি জড়িত বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের ওই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি বাস টার্মিনাল হবে এটি। আন্তর্জাতিকমানের বাস টার্মিনালের যতো সুবিধা থাকা দরকার, সবটাই এখানে থাকবে।