ঢাকা:সদ্য ঘোষিত মজুরি কাঠামো বৈষম্য নিয়ে পঞ্চম দিনের মত আজও রাস্তায় নেমেছে গার্মেন্টস কর্মীরা। সকাল থেকেই তারা মিরপুর, সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানা এলাকায় বিক্ষোভ করে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শ্রমিকরা। এরমধ্যে সাভার ও আশুলিয়ায় অন্তত: ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এছাড়া ওই এলাকার ১০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকরা। অন্যদিকে গাজিপুরেও সকাল থেকে বিক্ষোভ ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানেও পুলিশ লাডিঠচার্জ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৫টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়।
সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুর সংলগ্ন শেওড়াপাড়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। এতে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া কালশি এলাকাতেও রাস্তায় নামে তারা। সেখানে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ^াস দিলে কর্মসূচি তুলে নেয়া হয়।
এদিকে সাভার ও আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকসহ আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের আশুলিয়ার বেরন এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, সকালে বেরন এলাকার শারমিন গ্রুপের এএম ডিজাইন কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি দিয়ে সড়কে বেরিয়ে আসে। এ সময় শ্রমিকরা আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ এতে বাধা দেয়। পরে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শ্রমিক ও পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। পরে বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রায় ১ ঘন্টা পর টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপজেড সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন জানান, শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় আশুলিয়ার কাঠগড়া ও জামগড়াসহ বেশ কিছু এলাকার প্রায় ১০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। এছাড়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় আজও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভাঙচুর করে। ঢাকা বাইপাস সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, নগরের মোগরখাল এলাকায় বিসিএল কারখানার শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সকালে কাজ করতে না চাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষ কয়েকজন শ্রমিককে মারধর ও গালাগাল করে। এত শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে সড়কে নেমে আসে এবং বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে মোগরখাল ভোগড়াসহ আশপাশ এলাকার কারখানার শ্রমিকরাও কাজ বন্ধ করে দিয়ে সড়কে নেমে আসে। এ সময় কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভাঙচুর করা হয়। এই অবস্থায় আশপাশের এলাকার কমপক্ষে ১৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা দেয়া হয়। ঢাকা -বাইপাস সড়কে অবরোধ করলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে ওই সড়কে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট।