একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দ্রুত মামলা দায়ের করাসহ তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐকফ্রন্ট। এছাড়া পেশাজীবীদের নিয়ে শিগগিরই জাতীয় সংলাপের আয়োজন এবং নির্বাচনী সহিংসতায় যেসব এলাকার নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেসব এলাকা সফর করবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
রাজধানীর বেইলী রোডে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় মঙ্গলবার বিকালে অনুষ্ঠিত ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে এসব কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।
অনিয়মের অভিযোগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলফাল প্রত্যাখ্যানকারী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করতে এ বৈঠক করেন। বিকাল পৌনে পাঁচটায় বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত পড়ে শোনান বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, জনগণের জন্য জনগণের শাসন; অর্থাৎ জনগণ নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করবে। এর জন্য প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া পদ্ধতি। সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ক্ষমতা ও দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দেশের মালিক জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।
অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অপব্যবহার করে এবং সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকাকে নিষ্ক্রিয় করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। নীল নকশা অনুযায়ী ভোটের পূর্ব রাতে নির্বাচন কমিশন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে, সরকারি সমর্থনপুষ্ট ‘সন্ত্রাসী’ বাহিনীকে ব্যালট পেপারে নৌকা ও লাঙল মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখতে সাহায্য করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ফলে জনগণ নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার তথ্য-সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এসব বেআইনি কর্মকাণ্ড গুরুতর অপরাধ।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিকট আমাদের জোর দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে নির্বাচনের কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। জনগণ যেন কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের অনুলিপি পাওয়ার পর তা আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।