ঢাকা: সারা দেশে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গতকাল আরো ৪ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ চলাকালে সহিংসতায় নিহত হন অন্তত ২১ জন। ফলে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ জনে।
গতকাল নিহতদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ২ জন, রাজশাহীতে ১ জন ও সীতাকুণ্ডে একজন রয়েছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন (৫০) মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার ভোরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত ইসমাইল হোসেন গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের ধরমপুর কাজিহাটা এলাকার আজাহার আলীর ছেলে। তিনি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কমিটির আহবায়ক ছিলেন।
এছাড়া তিনি ইউনিয়ন কামারুজ্জামান স্মৃতিসংঘের সভাপতি ছিলেন। এ নিয়ে রাজশাহীতে নির্বাচনী সংহিসতায় তিন জন নিহত হলেন। ভোটের দিন সহিংসতায় রাজশাহী-১ আসনের তানোর উপজেলার মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতা মোদাচ্ছের হোসেন এবং রাজশাহী-৩ আসনের পাকুড়িয়ে ভোট কেন্দ্রে মেরাজুল ইসলাম নিহত হন।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক জানান, নির্বাচন চলাকালে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে দেওপাড়া ইউনিয়নের পালপুর-ধরমপুর স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘাত হয়। এতে বিএনপি কর্মীদের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন ইসমাইল। মুমূর্ষু অবস্থায় তখনই তাকে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর থেকেই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রামেক হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সরাইল ও নাসিরনগর প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের গোয়ালনগরে পূর্ব বিরোধের জের ধরে দুইজন নিহত হয়েছে। এসময় আরো ১০ জন আহত হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালনগর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের এডভোকেট জাহাঙ্গীর ও মেরাজের মধ্যে পূর্ব বিরোধের জেরে গতকাল দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীরের পক্ষের বরজু মিয়া (৬৫)কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এরপরই মেরাজের পক্ষের রাফিজা বেগমকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করে অপরপক্ষ। এসময় দু-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয় ১০ জন।
আহতদের কয়েকজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল, নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে নাসিরনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের উদ্যেশ্যে রওনা দেয়।
তবে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি আহত হিরন মিয়া ও সেলিম মিয়া নামে নিহত বরজু মিয়ার এক স্বজন জানান- রোববার ভোটের সময় নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যুবলীগ নেতা এডভোকেট জাহাঙ্গীর ও ইউনিয়ন যুবদল নেতা জয়নাল মিয়ার মধ্যে হাতাহাতি হয়।
এরজের ধরে জমিতে যাওয়ার পথে জয়নাল মিয়ার লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে বরজু মিয়ার ওপর হামলা করে। তাকে হত্যা করে জমিতে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয় লোকজন খবর পেয়ে তার মৃতদেহ জমি থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বরজু নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের টেকানগর গ্রামের বাসিন্দা। আহত মিনারা বেগম, কাউসার, মজু মিয়া ও হিরন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সার্কেল এএসপি মনিরুজ্জামান ফকির জানিয়েছেন-পূর্ব বিরোধের জের ধরে হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করেছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, সীতাকুণ্ডে দাউদ সম্রাট নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অপর এক যুবলীগ সদস্য। গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় সীতাকুণ্ড পৌরসদর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন রবি জানান, সীতাকুণ্ড পৌরসদর ভোলাগিরি এলাকায় পৌরসদর ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. দাউদ সম্রাট (৩০)কে ডাকাত সহিদুল ইসলাম সহিদেও নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক যখম করে। একই সময় পৌরসদর রেলস্টেশন এলাকায় পৌর যুবলীগের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন (৩০)কেও কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায় ঐ সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা আশংকাজনক অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। হামলাকারী সহিদ যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানায়।