ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সমালোচনা করে বলেছেন, কাকে ভোট দিতে হবে, সে ব্যাপারে দেশের মানুষ খুব সতর্ক। তারা বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করতে চলেছে।
সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ডব্লিউআইওএনকে (ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়ান নিউজ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চ্যানেলটির সদর দপ্তর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। ডব্লিউআইওএনের ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।
বিএনপির নেতারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত মন্তব্য করে সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একাত্তরে তারা দেশে পরাজিত হয়েছে। তারা দেশে যুদ্ধাপরাধ ও গ্রেনেড হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে আমাদের ক্ষমতায় এনেছে। তারা আমাদের জনগণ ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। বাংলাদেশের মানুষ ওই সব দিনের কথা ভোলেনি।’
ডব্লিউআইওএন বলেছে, এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫০ টির বেশি আসনে জয়ী হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড বা নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছে পাকিস্তান ও দেশটির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)। এই চেষ্টায় তাদের সঙ্গে আছেন বিএনপির নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ও আইএসআইকেই বা শুধু দায়ী করা কেন? দায়ী যদি করতেই হয় তাহলে আমাদের উচিত বিএনপিকে দায়ী করা। দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করতে আইএসআইয়ের কাছ থেকে ঘুষ ও অর্থ নিচ্ছে বিএনপি। দেশ ও দেশের জনগণের জন্য তাদের কোনো ভালোবাসা নেই। তারা দেশের কোনো অগ্রগতি চায় না।’
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা জোরের সঙ্গে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মানুষ দেশে সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে (শূন্য সহনশীলতা) বিশ্বাসী। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে পাকিস্তানের ব্যাপারে ভারতের নীতিকে সমর্থন জানান তিনি। ভারতের সঙ্গে সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অবসান না ঘটানো পর্যন্ত ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করার নীতি নিয়েছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী পরোক্ষভাবে এ ইঙ্গিত দেন যে অন্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আমাদের দেশ শূন্য সহনশীল। দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় আমরা অন্যান্য দেশ, বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এ নিয়ে দায়িত্বশীল সবার উচিত পরস্পরের সঙ্গে কাজ করা। একটি বিষয়ে আমরা নিশ্চিত এবং এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে আমরা আমাদের মাটিকে ব্যবহার করতে দেব না।’
প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাও প্রধানমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আগের মতো অত চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরিতার পরিবেশও নেই; বরং আমাদের সপক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’ আওয়ামী লীগ তরুণ সমাজের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ করতাম। এবার একচেটিয়াভাবে সবার সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সেটা টেরও পাচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হব।’ তিনি বলেন, মানুষ অন্তর থেকে চাইছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানে, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।
এর আগে ২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে ভারতের টাইমস নাউ টেলিভিশন। নির্বাচনের বিষয়ে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের ওপর আমার ভরসা আছে। তারা যদি ভোট দেয় আমি আছি, না দিলে আমি নাই, ও নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, করব। অনেকগুলো বড় কাজ আমরা শুরু করেছি, আরেকবার আসতে পারলে সে কাজগুলো শেষ করতে পারব।’
সাক্ষাৎকারে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও পানিচুক্তি এবং রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।