ধুপনি বকের দেখা

বিচিত্র

pic-12_163135সম্প্রতি একটি ধুপনি বকের দেখা মেলে পটুয়াখালীর বাউফলের দাশপাড়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম মাহামুদ রিপনের মাছের ঘেরে। এলাকার সবাই দেখেছে বকটিকে ওই ঘেরে আহারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে। মানুষের ভিড় দেখে ভয়ে কখনো উড়ে আশ্রয় নিয়েছে পাশের লম্বা রেইনট্রি গাছে। আবার কোলাহল থেমে গেলে নেমেছে ঘেরে শিকারের সন্ধানে।

গত কয়েক দিন এভাবে ধুপনি বকটি কাটিয়েছে ওই মাছের ঘেরে। ওই মাছের ঘেরের মালিক রিপন বলেন, ‘বকগুলো এখন আর এই এলাকায় দেখা যায় না। তবে ২০ থেকে ২৫ বছর আগে এসব এলাকার বিভিন্ন জলাশয়ে ধুপনি বকের আনাগোনা ছিল। তাই বকটি যেন কোনোভাবে ভয় না পায় এ জন্য এলাকার লোকজন এবং ঘেরের কর্মচারীদের আলাদা নির্দেশনা দেওয়া ছিল। যাতে বকটি ফিরে গেলেও আবার ঝাঁকসহ উড়ে আসে।’ স্থানীয়রা জানান, অনেক বছর পর একটি ধূসর বক এসেছে তাদের এলাকায়। অথচ একটা সময়ে অহরহ দেখা মিলত এই ধূসর বকের। আর দল বেঁধে তখন এলাকা মাতিয়ে তুলত ‘কুয়া আরনক’ ‘কুয়া আরনক’ ডেকে।

ধুপনি বকের দেখাউড়ছে ধুপনি বক

পাখি বোদ্ধারা জানান, বিশ্বজুড়ে ১১ প্রজাতি এবং বাংলাদেশে রয়েছে চার প্রজাতির ধুপনি বক। সম্প্রতি দেখা পাওয়া ধুপনি বকটির কালো কাজলের মধ্যে হলুদ চোখ। হলদে রঙের ঠোঁট করাতের মতো তিক্ষ্ন। গলা ও পা লম্বা, লেজ খাটো, ডানা বেশ প্রশস্ত। ঠোঁটের নিচের অংশ থেকে বুক সমান রয়েছে লোমে সাদাকালো রশির মতো একটি রেখা। পেটে ধূসারভ-সাদা ও দেহের বাকি অংশের অধিকাংশই নিলচে ধূসর। রোদে উড়ে যাওয়ার সময় ধুপনি বকের রূপ সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। স্থানীয়দের ধারণা এই বকটির শরীরের ওজন প্রায় দুই কেজি।

ধুপনি বক সাধারণত অগভীর হাওর, বিল, নদী-খাল, পুকুর, জলাশয়, আবাদি ভূমি, বেলাভূমি, নদীর মোহনায় জলচর পাখির বিচ্ছিন্ন ঝাঁকে আহারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ, সরীসৃপ, শামুক-ঝিনুক, কেঁচো ও পোকামাকড়।

ভীত স্বভাবের হলেও পটুয়াখালীর বিভিন্ন জলাশয়ে এ পাখির দেখা মিলত প্রায়। সময়ের বিবর্তনে এ ধুপনি বা ধূসর বকটি হারিয়ে যেতে বসেছে। অবশ্য এ জন্য পাখি বোদ্ধাদের ধারণা অধিকমাত্রায় শিকারিদের তৎপরতা এবং এদের আহারস্থলে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার এ দেশীয় প্রজাতির পাখিটিকে দুষ্প্রাপ্য করে তুলেছে।

এ বকটি সম্পর্কে পাখি বিশেষজ্ঞ ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, ‘ধুপনি বক বাংলাদেশের বড় প্রজাতির পাখির মধ্যে অন্যতম। দেখতেও মন কাড়ে দর্শনার্থীদের। নানা কারণে এটি আজ বিলুপ্তির পথে। উপকূলীয় এলাকার জলাশয়ের আশপাশের বড় গাছে এরা বাসা বানিয়ে থাকত। কিন্তু জলাশয়ে অধিক মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, পাখি সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ না থাকা, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, গাছ নিধনের ফলে এ প্রজাতিটি বিলুপ্তির পথে।

বৃহৎ আকৃতির দেশীয় প্রজাতির এ পাখিটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে ধুপনি সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় হারিয়ে যাবে ধূসর বা এই ধুপনি বকটি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *