ঢাকা: প্রভাবশালী মার্কিন ম্যাগাজিন টাইম এক প্রতিবেদনে আভাস দিয়েছে, রেকর্ড চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। দুই মেয়াদে তার সরকারের ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞের ফলে এবারের নির্বাচনেও ভোটাররা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবেন।
অবশ্য টাইমের প্রতিবেদনে ভঙ্গুর গণতন্ত্রের বিনিময়ে বাংলাদেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক সফলতা নিয়ে শেখ হাসিনার সমালোচকদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের ১১তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী রবিবার। অক্সফোর্ড পড়ুয়া ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ৮২ বছর বয়সী কামাল হোসাইন নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শিবির ঐক্যফ্রন্টের মুখোমুখি হয়েছেন ৭১ বছরের শেখ হাসিনা।
তবে শেখ হাসিনার আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ৭৪ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রধান খালেদা দুর্নীতির দায়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করছেন। ঢাকার আদালত তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষণা করেছেন।
কয়েক দশক ধরে পালাক্রমে ক্ষমতা এবং কারাগারের ভেতরে বাইরে রয়েছেন শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া। ১৬ কোটি মুসলিম অধ্যুষিত নাগরিকের দেশে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছেন। তবে ২০১৪ সালে দেশটির নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ওই বছরের নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। সংসদের ৩০০ আসনের অর্ধেকের বেশিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনী সহিংসতায় কয়েক ডজন মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
তবে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক এই দেশটিতে প্রতি ১০ জনের একজন তরুণ ভোটার। এদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন প্রথমবারের মতো এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের এক দশকের শাসনের পর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী কামাল হোসাইন শেখ হাসিনার প্রাথমিক চ্যালেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর স্বার্থকে আকৃষ্ট করছে কামাল হোসাইনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক আলী রিয়াজ টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই বোঝায় না, এর একটি বৃহৎ অর্থ রয়েছে; যার মধ্যে মানবাধিকার, আইনের শাসন, জবাবদিহিতা এবং সুশাসনও রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এসবের অনুপস্থিতি রয়েছে।
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান-ও গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আভাস দিয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রবিবার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবেন কি না, তা নির্ধারণ করতে ভোট দেবেন নাগরিকেরা। রক্তক্ষয়ী নির্বাচনী প্রচারের পরও শেখ হাসিনার (৭১) প্রধানমন্ত্রী থাকার পক্ষে পরিস্থিতি অনুকূল রয়েছে।
বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে তুলে এনেছে শেখ হাসিনার সরকার। তবে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগও রয়েছে। বিরোধীরা চলমান পরিস্থিতিকে দেশটির ৪৭ বছরের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বেশি শ্বাসরুদ্ধকর’ বলে উল্লেখ করেছে।
শেখ হাসিনা আশা করছেন, ১০ কোটি ভোটার সহিংসতাকে ঘৃণা করে দেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে গুরুত্ব দেবেন। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে যাওয়া ও গত এক দশকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হওয়ার বিষয় রয়েছে। এই প্রবৃদ্ধির বেশির ভাগই এসেছে দেশের ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস খাত থেকে, যেখানে ৪৫ লাখ মানুষ কাজ করেন। এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের সুবিধা বাড়ায় গড় আয়ু ৭২ বছর হয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।