ঢাকা: সারা দেশে আজ সোমবার থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামছে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে তারা সহায়তা করবে। নির্বাচনের পর ২ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মূলত জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকার সংযোগস্থলে (নডাল পয়েন্ট) অবস্থান করবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সেনাবাহিনী ৩৮৯টি উপজেলায়, নৌবাহিনী উপকূলীয় ১৮ উপজেলায় এবং বিজিবি সীমান্তবর্তী ৮৭ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবে। বিমানবাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান নির্বাচনে সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা ও থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন তাঁরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ডাকা হলে তারা ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারেন। জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন্ড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিতে পারবেন।
সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত নির্দেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব, তা লিখিত আকারে দেবেন।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কম-বেশি করা যাবে।
যে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তবে তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ থাকবে না। কিন্তু তাঁরা বাহিনীর পোশাকে থাকবেন। ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকবেন, তাঁদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিকটতম টহল দল ও স্থানীয় ক্যাম্প রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
সেনা মোতায়েনে সন্তোষ
সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আলাদা বিবৃতিতে তাঁরা নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
কামাল হোসেন বিবৃতিতে বলেন, সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আশা করেন, সেনা মোতায়েন দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করবে। সেনাবাহিনী জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না অথবা কোনো ব্যক্তি বা দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না।
বিএনপির মহাসচিব নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণে সেনাবাহিনীর প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।
সেনাবাহিনী বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক
গতকাল রোববার সকালে সিলেটে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ‘জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন’ বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক।’