আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) বিশেষ তৎপরতা দেখা গেছে। নির্বাচনে তারা তাদের পছন্দের লোকদের বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী মনোনীত করার জন্য প্রভাব খাটিয়েছে।
সংসদের ৩০০ আসনে আইএসআইয়ের তৈরি করা একটি প্রার্থী তালিকা বিএনপির কাছে পাঠানো হয় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে এ তালিকা পৌঁছানো হয়। অনুসন্ধানে একাধিক সূত্র থেকে এই তৎপরতার তথ্য ও নথি পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, আইএসআইয়ের তৈরি করা বিএনপির প্রার্থীদের দুটি আলাদা তালিকা তারেক রহমানের কাছে পৌঁছে দেন সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন। গত ৭ ডিসেম্বর দুবাইয়ের একটি হোটেলে এক গোপন বৈঠকে এটি জাকির হোসেনের হাতে তুলে দেন দুবাইয়ে কর্মরত আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ।
পরে জাকির হোসেন শহীদ মেহমুদকে নিশ্চিত করেছেন, এটি তারেক রহমানের হাতে পৌঁছেছে। তালিকার ব্যাপারে তারেক রহমানের হয়ে শহীদ মেহমুদের সঙ্গে দেনদরবারও করেছেন জাকির হোসেন।
এ থেকে বোঝা যায়, দেশের রাজনীতিতে আইএসআইয়ের প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী ও গভীর। শহীদ মেহমুদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল।
২০০৪ সালে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আইএসআইয়ে নিয়োজিত ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পরও আইএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জাকির হোসেন লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তিনি আসলে তারেক রহমান ও আইএসআইয়ের মধ্যে যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত জুন থেকে চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দুবাইয়ে জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদ অন্তত ১১টি বৈঠক করেছেন। তাদের সর্বশেষ বৈঠকগুলোর বিষয়বস্তু ছিল আইএসআইয়ের তৈরি করা প্রার্থী তালিকা। সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বরের বৈঠকে শহীদ মেহমুদ ও জাকির হোসেনের মধ্যে তালিকার নাম নিয়ে দরকষাকষি হয়েছে। তারেক রহমান এ তালিকায় কিছু পরিবর্তন চান বলে জানান বিএনপি নেতা জাকির হোসেন। এতে আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ জানান, পাকিস্তান পক্ষ জরিপ ভালো ‘জয়ী হওয়ার উপযোগী’ বিএনপি প্রার্থীদের এই তালিকা তৈরি করে।
আইএসআইয়ের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের কাছে প্রথমে নভেম্বরের কোনো এক সময় ৩০০ আসনের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠানো হয়।
এ তালিকায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াত নেতাদের নাম আছে। পরে ৭ ডিসেম্বর ১০ জনের আরেকটি তালিকা পাঠানো হয়। এই তালিকায় যাদের নাম আছে, তারা হলেন— ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-১), মাহমুদা হাবিবা (রাজশাহী-৫), আলহাজ এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন (ঢাকা-১৬), জিবা আহমেদ খান (ঝালকাঠি-২), মাহমুদুর রহমান (নারায়ণগঞ্জ-২), আহম্মদ সোহেল মঞ্জুর (পিরোজপুর-২), ইয়াসির খান চৌধুরী (ময়মনসিংহ-৯), সমীরণ দেওয়ান (খাগড়াছড়ি), ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) এবং দীপেন দেওয়ান (রাঙামাটি)। প্রথম তালিকা তারেক রহমানের কাছে পৌঁছানোর পর তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জাকির হোসেন শহীদ মেহমুদকে বলেন, তালিকায় এমন একজনের নাম আছে, যিনি পাঁচ-ছয় মাস আগে মারা গেছেন।
দ্বিতীয় দফায় পাঠানো ১০ জনের তালিকার ব্যাপারে জাকির হোসেন জানান, তারা মাহমুদা হাবিবাকে চেনেন না। এতে আইএসআই এজেন্ট জোর দিয়ে বলেন, তারা মনে করেন মাহমুদা একজন যোগ্য প্রার্থী। তার জয়লাভের সম্ভাবনা আছে। জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদের এই কথোপকথনে শহীদ মেহমুদ আভাস দেন, জাকির হোসেন ছাড়াও অন্য মাধ্যমেও তারা তারেক রহমানের কাছে তালিকা পাঠিয়েছেন।
এর আগে, ১৪ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠক থেকে জানা যায়, দেশের নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বিতর্ক নিয়ে পাকিস্তান পক্ষের বিশেষ আগ্রহ ছিল। এ বিষয়ে জাকির হোসেন একাধিকবার শহীদ মেহমুদের কাছে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন।