অস্ট্রেলিয়ার জনবহুল শহর সিডনির মধ্যাঞ্চলের বাণিজ্যিক এলাকার লিন্ডট ক্যাফেতে সন্ত্রাসী হামলা সৃষ্ট জিম্মি সংকট এখনও কাটেনি। আনুমানিক ৪০ জনের মধ্যে কেবল এখন পর্যন্ত পাঁচজন উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে, সিডনির বাণিজ্যিক এলাকায় দু’টি ও ক্যাফেতে দু’টি বোমা পেতে রাখা হয়েছে বলে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্ক বিরাজ করছে সিডনিজুড়ে। তাছাড়া, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়তে থাকায় এ আতঙ্ক বেশি কাজ করছে। তবে, আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, সশস্ত্র হামলাকারী প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোটের সঙ্গে কথা বলতে চান। তবে তিনি কী বলতে চান এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে সন্ত্রাসী হামলায় জিম্মি সংকট সৃষ্টির ছয় ঘণ্টা পর ওই ক্যাফের সামনের দরজা দিয়ে দু‘জন কাস্টমার এবং পেছন দিকের জরুরি বহির্গমন দরজা দিয়ে (ফায়ার ডোর) দিয়ে একজন শেফকে উদ্ধার করা হয়। এরপর আরও দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়। এতে উদ্ধার হওয়া লোকের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচে।
এই পাঁচজনের সহযোগিতায় নিরাপত্তা বাহিনী বাকিদের অক্ষত মুক্ত করতে শান্তিপূর্ণভাবে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় সংবাদ মাধ্যমগুলো।
এর আগে, সকালে মার্টিন প্লেস বাণিজ্যিক এলাকার লিন্ডট চকোলেট ক্যাফেতে সন্ত্রাসীদের হামলার পর এর জানালা দিয়ে আরবি লেখা সম্বলিত একটি ব্যানার উড়তে দেখা যায়। প্রথমে ওই পতাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বলা হলেও এখন এ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
জিম্মিদশা নিয়ে বেশ কয়েকবার বক্তব্য পরিবর্তন করলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সবশেষে জানিয়েছিলেন, ওই ক্যাফের ১০ কর্মী ও ৩০ কাস্টমারসহ অন্তত ৪০ জন সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি ছিলেন। তবে, পাঁচজনকে উদ্ধারের পর আর কতো জন বাকি রয়েছেন এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া, প্রথমে ‘হামলাকারী দল’ বলা হলেও এখন বলা হচ্ছে ক্যাফের ভেতরে দু’জন হামলাকারী থাকতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাফের বাইরে থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী।
সিডনির একটি প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, জিম্মি লোকজনকেই ক্যাফের জানালা দিয়ে আরবি লেখার পতাকা ওড়াতে এবং হাত উঁচিয়ে রাখতে বাধ্য করছে চতুর হামলাকারী, যেন নিরাপত্তা বাহিনী কোনো অভিযান চালাতে না পারে।
স্থানীয় পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলাকারীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে প্রশাসন। এছাড়া, ক্যাফের চারদিকে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নিউজ সাউথ ওয়েলসের প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র জানান, সকাল পৌনে ১০টার দিকে লিন্ডট চোকোলেট ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে লোকজন জিম্মি করার খবর আসে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দার কর্মকর্তারাসহ নিরাপত্তা বাহিনী ঘিয়ে ক্যাফেটি ঘিরে ফেলেন।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, একদিকে যখন স্থানীয় প্রশাসন সমঝোতার চেষ্টা করছে তখন অন্যদিকে দফায় দফায় জরুরি বৈঠকে বসছে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকের পর নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, জিম্মি সংকটের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট জাতির উদ্দেশে দুই দফা ভাষণে সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। একইসঙ্গে এই ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন।
এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় সংকট নিরসনে মতৈক্যের কথা জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা বিল শর্টেন। তিনি সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমর্থন দেওয়ার কথা জ্ঞাপন করেছেন। বিল শর্টেন বলেন, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সার্থে এবং নিরাপত্তার ইস্যুতে আমরা এক এবং অভিন্ন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মার্টিন প্লেস এলাকায় যানচলাচলে সীমাবদ্ধতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি মার্টিন প্লেসসহ সিডনির জনগণকে নিরাপদে সরে থাকতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে সিডনি শহরের স্থল, নৌ এবং আকাশ পথে ব্যাপক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাস, ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিডনি শহরের ওপর দিয়ে নিরাপত্তায় নিয়োজিত হেলিকপ্টার ছাড়া সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সিডনির হারবার ব্রিজ, অপেরা হাউজসহ বিশেষ বিশেষ স্থাপনাও। এছাড়া, সিডনি এয়ারপোর্টেও বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এই সন্ত্রাসী হামলা ও জিম্মি সংকটের প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ায় কর্ম ও ভ্রমণরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে নিরাপত্তার কারণে সিডনিস্থ মার্কিন কনস্যুলেট কার্যালয়ও খালি করে ফেলা হয়েছে।
এই হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারসহ বিশ্ব নেতারা।