মন্ত্রী মদন মিত্রকে সারদা কাণ্ডে সিবিআইয়ের গ্রেপ্তার নিয়ে শনিবার দিনভর উত্তাল ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য রাজনীতি। শুক্রবার নবান্ন্ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সঙঘাতের ডাক দিয়েছিলেন তা তীব্র আকারধারণ করে রাজপথে। ময়দান থেকে আলিপুর কোর্ট সর্বত্র তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক ও বিভিন্ন্ ক্লাব সংগঠন প্রতিবাদে পথে নামে। কোথাও বিক্ষোভ, কোথাও মিছিল, কোথাও আবার অবস্হান অবরোধের রূপ নেয়। মদন মিত্রকে আলিপুর কোর্টে তোলার সময় সমর্থকদের চাপে ভেঙে পড়ে ব্যারিকেড। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ময়দানের ধরনামঞ্চ। খেলাধুলার জগতের ব্যক্তিত্বদের কর্মসূচিতে হঠাত্ই হাজির হন মমতা। ঘোষণা করেন, আমি সরকারের পক্ষ থেকে আসিনি, আমি নাগরিক হিসাবে আপনাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে এসেছি।
এদিনও মমতার. বক্তব্যে আপাদমস্তক আক্রমণের নিশানায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। একদিকে যখন বাম ও বিজেপি রাস্তায় নেমে একসুরে সারদা কাণ্ডে মমতার গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে, তখন ময়দানের ধরনা মঞ্চ থেকে প্রতারণা মামলায় ধৃত সাহারা কর্তা সুব্রত রায়ের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ তুলে পাল্টা দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারদা তদন্ত নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির সঙঘাত যে আরও বড় আকার নিতে যাচ্ছে সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট হয়ে গেছে সেদিন। সারদার অনুষ্ঠানে মদন মিত্রর উপস্হিতির ছবি নিয়ে প্রচার চালাচেছ বিরোধীরা। সিবিআইও তদন্তে তা হাতিয়ার করেছে। এর পাল্টা হিসাবে সাহারা মালিকের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির পূর্বের একটি ছবি পোস্টার করে দশ লক্ষ ছাপিয়ে বাংলা থেকে দিল্লি সর্বত্র আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “যদি একটা ছবি দিয়ে কিছু প্রমাণ করা যায়, তবে সাহারা মালিকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবিও আছে। কেন গ্রেপ্তার হবে না? সাহারাও মানুষকে ঠকিয়েছে। সাহারার লোগো পরে তো শচীন-সৌরভ ক্রিকেট খেলেছেন, তাই বলে তাঁদের জেরা করতে হবে নাকি? আইন তো ‘ডিসক্রিমিনেট’ করতে পারে না কলকাতা থেকে দিল্লি আমি দশ লক্ষ পোস্টার করে দেব। কলকাতা থেকে দিল্লি সর্বত্র লাগাও।” ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রর গ্রেপ্তারকে সার্বিকভাবে ক্রীড়া জগতের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হিসাবেই ব্যাখ্যা করেছেন মমতা। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “মদন চোর, আমি বিশ্বাস করতে রাজি না। মদন অপরাধ করেছে আমি বিশ্বাস করতে রাজি না। আমি বিশ্বাস করি না–মদনের এত দুঃসময় এসেছিল যে সারদার টাকায় ও বউ বাচচাকে খাইয়েছে।” স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, ক্রীড়ামন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে খেলাধুলার জগতকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এদিন ফুটবলার গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরি, দীপেন্দু বিশ্বাস, বিদেশ বসু, মানস ভট্টাচার্য, ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়, শুটার মাম্পি দাসের মতো খেলাধুলার জগতের অসংখ্য মানুষের উপস্হিতিতে ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে অবস্হান শুরু হয়৷ যোগ দেন বিভিন্ন্ ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংগঠন-সহ বাস-ট্যাক্সি ইউনিয়নের সদস্যরাও৷ ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে ফের গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে অবস্হান মঞ্চে ফিরে আসেন ক্রীড়া জগত্-সহ বিভিন্ন্ ক্ষেত্রের হাজার হাজার মানুষ। ব্যক্তি মদন মিত্রর জনপ্রিয় ইমেজই এদিন ক্রীড়াপ্রেমীদের বিক্ষোভে ফুটে বারবার। মমতার কথায়, “যদি বলেন মদন কোনও পুজাতে গিয়েছে, কেউ বিপদে পড়েছে মদন সাহায্য করতে ছুটে গেছেন, কেউ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছে না, মদন ব্যবস্হা করেছে তা আমি বিশ্বাস করব। কারণ মদন এমনই একজন মানুষ।” গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে সোমবার থেকে মঞ্চ তৈরি করে লাগাতার ধরনা-অবস্হান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, তিনিও মাঝে মাঝে আসবেন মঞ্চে। বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, “আমরা চোর? সবচেয়ে কষ্ট করে রাজনীতি করে সারা জীবন মার খেয়ে, সারা জীবন লড়াই করে, আমরা হয়ে গেলাম চোর। আর তুমি সাধু?” ক্রীড়াব্যক্তিত্বদের কর্মসূচিতে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের বিজেপি হুমকি দিয়েছে বলেও মমতার অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, “গণতন্ত্রে সরকার আসে চলে যায়। মনে রাখবেন আপনি সরকারে এসেছেন বলে সংবিধান পাল্টানোর ক্ষমতা আপনার নেই।”