অগোছালো নন। টিপটপ, পরিপাটি না বলার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। সবচেয়ে সফল ক্রিকেটারও। কথা বলেন যুক্তি দিয়ে। কিন্তু এই প্রথম ক্যারিয়ার নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস, বুট কবে তুলে রাখবেন, তার একটি বেঞ্চ মার্ক অবশ্য এঁকে দিয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু পরিষ্কার করে বলেননি, সত্যিকার অর্থে কবে সমাপ্তি রেখা টেনে দিবেন ক্যারিয়ারের। তারপরও ক্রিকেট পাড়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর তিনি আর ক্রিকেট খেলবেন না। রাজনীতির মঞ্চে নামার ঘোষণার দিন মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলাই তার টার্গেট। ক্যারিয়ার রিভিউ করবেন কিনা, সেটা নিয়ে এখনই ভাবছেন না।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে বেঞ্চ মার্ক ধরেই বলা হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান সিরিজটি ঘরের মাঠে শেষ ওয়ানডে। সিলেটে খেলবেন দেশের মাটিতে শেষ ওয়ানডে। আজকের ম্যাচটি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আবার তার শেষ ওয়ানডে। ওয়ানডেটি খেলতে নেমে আবার স্পর্শ করবেন সাবেক অধিনায়ক কাজী হাবিবুল বাশারের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ৬৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ড। ৯ ডিসেম্বর, রবিবার মাশরাফির ক্রিকেট ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল দিন। ২০০১ সালের ২৩ নভেম্বর ক্যারিয়ার শুরু চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। এরপর খেলেছেন সারা বিশ্বে। খেলেছেন লন্ডনের লর্ডস, নটিংহ্যামশায়ার, মেলবোর্ন, সিডনি, ক্যানবেরা, অ্যাডিলেড, নেলসন, হ্যামিল্টন, ওয়েলিংটন, জোহানেসবার্গ, নাইরোবি, হারারে, দুবাই, কলকাতা, করাচি, লাহোর, কলম্বোসহ আরও অনেকগুলো শহরে।
১৭ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাশরাফি খেলেছেন ২০০ ওয়ানডে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক গড়েছেন বিরল এই রেকর্ড। দুই হাঁটুতে সাত সাতটি অস্ত্রোপচার না হলে সংখ্যাটা ২০০-এর জায়গায় আরও বেশিই হতো! তারপরও বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে খেলার ডাবল হান্ড্রেড করতে পেরে ভীষণ খুশি, ‘এমন একটি ল্যান্ড মার্ক গড়তে পেরে ভালোই লাগছে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এমন রেকর্ড গড়ায় ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই। ’
২০০ ওয়ানডে খেলে রেকর্ড বইয়ের সোনালি পাতায় জায়গা নেওয়া মাশরাফি আজ আরও একটি রেকর্ড লিখতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কদের মধ্যে ৬৯ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে বাশার এতদিন এককভাবে রেকর্ডটি নিজের করে রেখেছিলেন। আজ টস করতে নেমে বাশারের পাশে নাম লিখবেন মাশরাফি। দুজনেই সমানভাবে ৬৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ড গড়বেন। সিলেটে পেছনে ফেলবেন বাশারকে। তবে জয়ের সংখ্যায় সবার উপরে টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক। এখন পর্যন্ত ৬৮ ওয়ানডেতে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জয় ৩৯টি। বাশারের জয় ২৯টি। বাশারকে ছোঁয়ার ম্যাচটি একদিকে যেমন আনন্দের। বিপরীতে বেদনারও। যদি বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয় তার শেষ টুর্নামেন্ট, তাহলে আজই হতে যাচ্ছে মিরপুরে তার শেষ ওয়ানডে। আগামী জুলাইয়ের আগে বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো ম্যাচ নেই। তাহলে ধরেই নেওয়া যায় মিরপুরে আজ শেষ ওয়ানডে খেলছেন মাশরাফি! দেশের সবচেয়ে অধিনায়কের ক্রিকেট বেশ জ্বলজ্বলে। ২০০ ওয়ানডের একটি আইসিসির ব্যানারে। লাল-সবুজ পতাকার ছায়ায় খেলেছেন ১৯৯টি। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের জার্সি গায়ে আজ খেলবেন ২০০ নম্বর ওয়ানডে। ক্যারিয়ারের ২০০ ওয়ানডের অধিকাংশই খেলেছেন প্রিয় মিরপুর স্টেডিয়ামে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলেছেন সাকল্যে ৬টি। মিরপুরে সংখ্যাটি ৬৩। এই বছরই খেলেছেন ১২টি। অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন এখন পর্যন্ত ২৫টি। পারফরম্যান্স কিন্তু নজরকাড়া। বোলার মাশরাফি ৬৩ ওয়ানডেতে উইকেট নিয়েছেন ৭৭টি। সেরা পারফরম্যান্স নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪/৪৪। মিরপুরে ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। সব মিলিয়ে মাশরাফির উজ্জ্বল ক্যারিয়ার ২০০ ওয়ানডেতে ১৭২২ রান এবং উইকেট ২৫৫টি।