ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাসে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। ৯বছর জোর করে ক্ষমতায় থাকার পর ৯ বছর কারাাগারে। এরপর ৯বছর তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। মনোনয়নপত্র দাখিল না করেও তিনি এমপি হয়েছেন। শপথ নিয়েছেন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে। তাই আজকের জাতীয় পার্টি বাংলাদেশর রাজনীতি ও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একটি শক্ত সেতুও বটে।
আজকের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, এখন যদি জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে যায় তবে আওয়ামীলীগ চরম সংকটে পড়বে। বলা যায়, ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। আর যদি জাতীয় পার্টি সরকার বিরোধী জোটে যায়, তবে দেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় চলে আসবে। মন্তব্যে বলা যায়, এরশাদ ছাড়া আওয়ামীলীগ ক্ষমতাহীন। তাই জাতীয় পার্টি বা এরশাদ এখন আওয়ামীলীগের পুঁজি। এই পুঁজিকে ধরে রাখার জন্য আওয়ামীলীগ সব কিছুই করবে এটাই স্বাভাবিক।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে এরশাদ সাহেবকে নিয়ে যা যা হয়েছে জাতি তা জানে। তবে এটা পরিস্কার যে, জাতীয় পার্টি না থাকলে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন টিকতো না এবং ৫ বছর ক্ষমতাও থাকা যেত না।
এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে আরো বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আওয়ামীলীগের বলয় থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ন নেতা এখন ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সরকার বিরোধী অবস্থানে। তাই আগের চেয়ে বেশী ঝুঁকিপূর্ন অবস্থানে আওয়ামীলীগ এটা স্বীকার করা উচিত। এই অবস্থায় জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে এখন সরে গেলে আওয়ামীলীগের কঠিন পরিস্থিতির মুখোুমখি হতে হবে। তাই এখন জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগ তথা বর্তমান সময়ের রাজনীতির জন্য একটি বড় ফ্যাক্টর।
সম্প্রতি এরশাদ সাহেব ২০১৪ সালের মত বার বার অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে যাওয়া, না যাওয়া বা অন্য কোন জায়গায় এরশাদের গোপনীয় অবস্থান, রাজনীতিতে নতুন মোড়ের জন্ম দেয়। অনেকে বলছেন, জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদ সাহেব আবার বিদায় হচ্ছেন না তো!
এখন প্রশ্ন আসছে এরশাদ সাহেব এখন কোথায়! কেমন আছেন তিনি? মহাসচিব পরিবর্তন ও বিদায়ী মহাসচিবের মনোনয়নপত্র বাতিলের খবর কি এরশাদ সাহেব জানেন? যে চিঠিতে নতুন মহাসচিব হলেন বর্তমান সরকারের প্রতিমন্ত্রী রাঙা সাহেব, এই খবর কি এরশাদ সাহেব স্বজ্ঞানেই জানেন? চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া হতে পারে এটা কি এরশাদ সাহেব জানেন? যদি স্বজ্ঞানে তিনি এসব জেনেই থাকেন তবে তিনি অন্তরালে কেন? প্রকাশ্যে আসলে সমস্যা কোথায়? তিনি অসুস্থ থাকলেও তো নেতা-কর্মীরা তাকে দেখতে যেতে পারেন। যেহেতু এরশাদকে কেউ দেখতে পারছেন না, সুতরাং এরশাদের অনুপুস্থিতি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা থাকাই স্বাভাবিক।
তবে ভাল হবে, কোন সমস্যা না থাকলে এরশাদকে উন্মুক্ত করা। এতে আওয়ামীলীগ ও সরকারের জন্য ভাল। আর তা না হলে এরশাদ ইস্যু দিন দিন নুতন নতুন নাটকের জন্ম দিবে যা আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে আন্তরায় হতে পারে।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী