ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নির্বাচনী পরিবেশের বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেছে বিএনপি। সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে এসব বিষয়ে জানায় দলটি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের নির্বাচনী পরিবেশ বিষয়ে বিএনপি ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে দলটি। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে হয়রানিমূলক কোনো মামলা না দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি বলেছে, সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের নামে ‘হয়রানিমূলক’ মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী সদর আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী খায়রুল কবির খোকনকে আজ বুধবার বিশেষ নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে—এ বিষয়টিও প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে দলটি। বিএনপি বলেছে, একটি বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সরকারের ‘পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বৈঠক সূত্র আরও বলছে, ইইউ আগামী নির্বাচনে তাদের কোনো প্রতিনিধি পাঠাবে না। কিন্তু সফররত প্রতিনিধি দলটি আগামী এক মাস বাংলাদেশে অবস্থান করবে। এই সময়ে দেশের নির্বাচনী পরিবেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে ইইউ। এ ছাড়া বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে সরকারের আচরণ কী হয়, সেটিও জানার চেষ্টা করবে ইইউ।
আজকের বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ডেভিড নোয়েল ওয়ার্ড ও ইরিনা মারিয়া গৌনারি এবং ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দীন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইইউর দুজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ গত মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন। তাঁরা নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে ইইউর দুই সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল সাক্ষাৎ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা।
ইসির সঙ্গে বুধবার বৈঠকের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক বলেছেন, এবার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে না৷ তাদের পরিবর্তে ঢাকায় আসা এই দুই পর্যবেক্ষক সার্বিক পরিস্থিতিতে নজর রেখে প্রতিবেদন দেবেন।
পর্যবেক্ষক না পাঠানোর কারণ হিসেবে রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক বলেন, যেখানে নির্বাচনে সহিংসতা, কারচুপি ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেখানে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে থাকে। পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে হলে কমপক্ষে ছয় মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করতে হয়। এ ছাড়া ইইউর অন্য অংশীদার দেশগুলোতেও নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর চাপ রয়েছে। আর ইইউ সদর দপ্তর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ফলে যতগুলো দেশ থেকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ এসেছে, তার সবগুলো রাখা ইইউর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ইইউ থেকে একটি দুই সদস্যের নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ দল এসেছে। যার মাধ্যমে ইইউ বাংলাদেশের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রত্যাশা করছে, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ হবে। এটিও ইইউ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর কারণ।