ঢাকা: বিএনপিসহ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নির্বাচনে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন,আমরা চাই প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ, প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন। বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট না থাকলে এটা প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ হবে না। একইসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির পরিস্থিতি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়া বিএনপি অচল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,তারা একই বৃন্তে দুটি ফুল। আজ ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন,এটা অভিনব কিছু নয়।
জামায়াতকে ছাড়া বিএনপি অচল। তারা একসঙ্গেই কাজ করছে, রাজনীতি করেছে এবং সাম্প্রদায়িকতা করেছে।
২০১৪ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা হয়েছে সেটিও বিএনপির সঙ্গে মিলে জামায়াত করেছে বলে অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন,জামায়াতকে আলাদা করে লাভ নেই। বিএনপি থেকে জঙ্গিদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন,এই যে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, সে কি? সে জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত নয়? বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গিয়েছে। তাহলে শাকিলা ফারজানা যদি জঙ্গি না হয়, তাহলে জঙ্গি কে? এরকম অনেক জঙ্গিকে তারা মনোনয়ন দিয়েছে বলে আমরা জানি। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব-উন নবী খান সোহেলের মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ার পেছনে সরকারের কোনো ভূমিকা রয়েছে কিনা। উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন,এটা তাদের (বিএনপির) ইন্টারনাল ব্যাপার।
এর মধ্যে দুজন নেতা আছেন যারা তাদের মনোনয়ন কাংখিত জায়গায় দেয়া হয়নি বলে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। মির্জা আব্বাস সময় মত মনোনয়নপত্র জমা দেননি। নির্বাচন কমিশন তো আর নিয়মের বাইরে যাবে না। আমরা যতটুকু জানি বিএনপির জগাখিচুরি অবস্থা, পরিস্থিতি মির্জা ফখরুলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,আমাদের সঙ্গে তাদের অনেক কথা হয়েছে, এসব বিষয়ে আমাদের কথা বলা উচিত না। তবে তারা বলেছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। তাই তারা নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন,ঐক্যফ্রন্টের হচপচ অবস্থা,ঐক্যফ্রন্টে ঐক্য নেই।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মনোনয়ন নেননি। তিনি বলেছেন, তিনি সন্ত্রাসীদের হাতে মনোনয়ন নেবেন না, কার হাত থেকে নেবেন না? আমরা জানি কানাডার আদালত বিএনপি এবং তারেক রহমানকে সন্ত্রাসী হিসেবে রায় দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না– এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,কথাবার্তা আছে, বলব কেন? গোপন কথা গোপন থাক। আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের অসুস্থতা নিয়েও ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। তারা জানতে চান, নির্বাচনের আগে এরশাদের এবারের অসুস্থতা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তার অসুস্থ হয়ে পড়ার মত কোনো বিষয় কি না। উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন,অসুস্থতা নিয়ে এমন কথা না বলাই ভাল। অসুস্থতা গতবারের মত নয়। অবস্থা সঙ্কটের দিকে ছিল, এখন স্থিতিশীল আছে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হয়রানি করা হচ্ছে-এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন,তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলুন কোথায় কোথায় বিএনপির প্রার্থীকে বাধা দেয়া হচ্ছে? তাহলে নির্বাচন কমিশন তার ব্যবস্থা নেবে।
অন্ধকারে ঢিল ছোড়া বিএনপির পুরোনো অভ্যাস। জামায়াতের ভেতরেও মুক্তিযোদ্ধা আছে, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির দৃষ্টিতে তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তাদের ব্যাখ্যা বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক নন, বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা তাদের মনগড়া মুক্তিযোদ্ধা। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমরা জাতীয় পার্টিকে বলেছি প্রয়োজনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে দিতে। কিন্তু যোগ্য ও জেতার মতো প্রার্থী হতে হবে। আমরা যাদের যোগ্য এবং জয়ী হওয়ার মতো মনে করেছি, তাদের মনোনয়ন দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।