ঢাকা: জাসদের শিরীন আক্তারকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে ফেনীতে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঝাড়– মিছিল, অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষোভ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ, বিক্ষোভ বাড়ছে আওয়ামী লীগে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ ও ঝাড়ু মিছিল করা হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষুব্ধরা এসে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে দলীয় মনোনয়ন দাবি করছেন। কোনো না কোনো প্রার্থীর পক্ষের কর্মী ও সমর্থকরা হাতে ব্যানার নিয়ে মনোনয়নের দাবি জানাচ্ছেন। স্লোগান দিচ্ছেন প্রার্থীর পক্ষে। আবার অনেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন। সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈনকে মনোনয়ন না দেয়ায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা।
মহাজোট থেকে জাপা প্রার্থীর মনোনয়নের খবর আশুগঞ্জ-সরাইলে প্রচার হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রতিবাদে নেমে আসেন রাস্তায়। একই আসনের অপর প্রার্থী শাজাহান আলম সাজুর মনোনয়নের দাবিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করা হয়। মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ভাড়া বাড়ির সামনে একটি দোকানের ওপর স্থাপিত কাঠের নৌকা নামিয়ে ফেলা হয়েছে। মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তার সমর্থকরা এ কাজ করেছেন বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন। নরসিংদী-৩ আসনে (শিবপুর) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সমর্থকরা। সোমবার উপজেলা সদরে এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়। এতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমর্থকরা অংশ নেন। জামালপুর-৫ সদর আসনে আওয়ামী লীগ নেতা ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক রেজাউল করিম রেজনুকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন তার সমর্থকরা।
কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের তারাগুনিয়া বাজারে তারা বিক্ষোভ মিছিল এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা-কৃষ্ণপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে তার সমর্থকরা। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সালকে মনোনয়ন দেয়ার খবর নগরকান্দা-সালথায় প্রচার হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কিশোরগঞ্জ-১ (হোসেনপুর-কিশোরগঞ্জ সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় দুজনের নাম উল্লেখ থাকায় কে ওঠবেন নৌকায়- সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নাকি মশিউর রহমান হুমায়ুন, সেই প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত।
এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দু’পক্ষের নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকলেও থেমে নেই মিছিল-পাল্টা মিছিল। ফেনী-১ আসনে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে মহাজোটের প্রার্থী মেনে না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে গতকাল সকাল ১০টায় ছাগলনাইয়া পৌর শহরের জমাদ্দার বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় বর্তমান এমপি শিরীন আখতারের বিরুদ্ধে কালো পতাকা, ঝাড়ু মিছিল ও জুতা প্রদর্শন করে স্লোগান দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে মানববন্ধন করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
রহনপুর কলোনি মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিকালে রহনপুর ডাকবাংলো চত্বর থেকে মহিলা লীগ কর্মীরা ঝাড়ু মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তা পণ্ড করে দেয়। কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে। কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের তারাগুনিয়া বাজারে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বাদ পড়ছেন এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন শুরু করেছেন তার সমর্থকরা। এমনকি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে কলাগাছ অভিহিত করে বিভিন্ন জায়গায় কলাগাছ নিয়েও মিছিল করেন তারা।
এরকম অন্তত আরো ৩০টি নির্বাচনী আসনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন জোট-মহাজোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ক্ষোভ-বিক্ষোভ আরো বাড়তে পারে। এজন্য দল থেকে এবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, বিদ্রোহী হলেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার। এ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জরিপের ওপর ভিত্তি করে মনোনয়ন দিয়েছি। তাই এবার বিদ্রোহী মানেই আজীবন বহিষ্কার। অতীতের কথা বাদ। এবার আর সে সুযোগ থাকবে না।
দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল পরিবার। অনেকের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন থাকতে পারে এমপি হওয়ার। এটা খুব স্বাভাবিক, একটি পরিবারের মধ্যেও অনেক সময় ক্ষোভ-অভিমান থাকে। এবার এটা খুব ব্যাপক আকারে বাংলাদেশে যেটা হয়, এবার সেটা হবে না বলে আশা করছি। এদিকে দলের মাঠপর্যায়ের এমন চিত্র নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। ২৫শে নভেম্বর থেকে দলের মনোনীত প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া শুরু করে আওয়ামী লীগ। এ পর্যন্ত ২৩১ জনকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করে চিঠি দেয়া হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো আসনে দুইজন প্রার্থীকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।