ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে ২১১ জনকে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে নতুন মুখ অনেক। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া শুরু করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দলীয় মনোনয়নের চিঠি যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের একটি তালিকা আওয়ামী লীগ সূত্রের কাছ থেকে পেয়েছে প্রথম আলো। এই তালিকা প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ শিগগির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত ২১১টি আসনে যাঁরা নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন, আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে তাঁদের নাম পাওয়া গেছে। তালিকা থেকে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে নৌকার নতুন মাঝিদের একটি চিত্র পাওয়া গেছে।
নওগাঁ-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল। তার জন্য বাদ পড়েছেন সাংসদ আবদুল মালেক।
সিরাজগঞ্জ–৩ আসনে চিঠি পেয়েছেন ডা. আবদুল আজিজ। তাঁকে জায়গা দিতে বাদ পড়েছেন বর্তমান সাংসদ ম ম আমজাদ হোসেন মিলন।
জামালপুর-৫ আসনে দুইজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন মুখ মোজাফ্ফর হোসেন। বর্তমান সাংসদ রেজাউল করিম হীরাও চিঠি পেয়েছেন। এদের মধ্যে থেকে একজনকে চূড়ান্ত চিঠি দেওয়া হবে।
নেত্রকোনা–২ আসনের সাংসদ ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের পরিবর্তে চিঠি পেয়েছেন আশরাফ আলী খান খসরু। নেত্রকোনা–৩ আসনে মনোনয়ন পেলেন অসীম কুমার উকিল। এই আসনে বর্তমান সাংসদ ইফতিখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু বাদ পড়েছেন।
টাঙ্গাইল-৩ আসনে বিতর্কিত সাংসদ আমানুর রহমান খান বাদ পড়েছেন। তাঁর জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর বাবা আতাউর রহমান খান। টাঙ্গাইল-৬ আসনে খন্দকার আবদুল বাতেনের পরিবর্তে চিঠি পেয়েছেন আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি ঢাকার সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনের ছেলে।
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। দুইজনের নামে চিঠি তৈরি করা হয়েছে। অসুস্থ সৈয়দ আশরাফ নির্বাচন করতে পারলে তিনিই হবেন নৌকার মাঝি। তবে এই আসনে বিকল্প হিসেবে এসেছে নতুন একজনের নামা। তিনি মশিউর রহমান হুমায়ুন।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেস সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। তাঁর জন্য ছাড়তে হয়েছে সোহরাব উদ্দিনকে।
ঢাকা-১ আসনে চিঠি পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এ আসনে বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান খানকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন সালাম ইসলাম।
ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগর মনোনয়ন পেয়েছেন হাজী সেলিম। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে আবার আওয়ামী লীগেই ফিরে আসেন তিনি।
ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের গত দুইবারের সাংসদ দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক। এবার তাঁর পরিবর্তে বেছে নেওয়া হয়েছে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাদেক খানকে।
ঢাকা-২০ আসনে এম এ মালেকের পরিবর্তে চিঠি পেয়েছেন বেনজীর আহমেদ।
গাজীপুর-৩ আসনে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রহমত আলীর পরিবর্তে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ।
ফরিদপুর-২ আসনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাদ পড়েছেন মনোনয়ন দৌড় থেকে। তাঁর জায়গায় চলে এসেছেন মনজুর হোসেন। মাদারীপুর–৩ আসনে সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম বাদ পড়লেন। তাঁর জায়গায় এসেছেন দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। আরেক কেন্দ্রীয় নেতা বিএম মোজাম্মেল হক শরীয়তপুর-১ আসনে মনোনয়ন হারিয়েছেন। তাঁর জায়গা পেয়েছেন ইকবাল হোসেন অপু। বর্ষীয়ান রাজনীতিক শওকত আলীর পরিবর্তে শরীয়তপুর-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম এনামুল হক শামীম।
কুষ্টিয়া-৪ আসনে সেলিম আলতাফ জর্জ চিঠি পেয়েছেন আবদুর রউফের পরিবর্তে। ঝিনাইদহ-৩–এ মো. শফিকুল আজম খান চিঠি পেয়েছেন নবী নেওয়াজের জায়গায়। যশোর-২ আসনে মনিরুল ইসলামের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন। মাগুরা-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর। সেখানে বাদ পড়েছেন বর্তমান সাংসদ এটিএম আবদুল ওয়াহহাব।
নড়াইল-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এ আসনে বর্তমান সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান।
বাগেরহাট–২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের এক তরুণ। তাঁর বাবা বাগেরহাট–১ আসনের সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিন। এই তরুণের নাম শেখ সারহান নাসের তন্ময়। তাঁকে মনোনয়ন দিতে বাদ পড়েছেন মীর শওকত আলী বাদশা। খুলনা-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক তরুণ শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। সেখানে বাদ পড়েছেন বর্তমান সাংসদ মিজানুর রহমান। খুলনা–৬ আসনে শেখ শেখ মো. নুরুল হকের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন আকতারুজ্জামান বাবু।
পটুয়াখালীর তিনটি আসনে এসেছেন নতুন মুখ। পটুয়াখালী-২ আসনে আসম ফিরোজের পরিবর্তে শামসুল হক রেজা, পটুয়াখালী–৩ আসনে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের পরিবর্তে এস এম শাহাজাদা এবং পটুয়াখালী-৪ আসনে মাহবুবুর রহমানের পরিবর্তে মুহিবুর রহমান মুহিব।
পিরোজপুর-১ আসনেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সাংসদ এমএ আউয়ালের পরিবর্তে চিঠি পেয়েছেন আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম।
সিলেট–১ আসনের বর্তমান সাংসদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তাঁর আসনে তাঁর ভাইকেই দেওয়া হয়েছেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে আবদুল মোমেন নৌকার নতুন মাঝি হলেন সিলেটের এই আসনটিতে। মৌলভীবাজার ৩ আসনে সায়রা মহসীনের পরিবর্তে চিঠি পেয়েছেন নেসার আহম্মেদ। হবিগঞ্জ–৪ আসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মো. ফরাস উদ্দিন মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁকে জায়গা ছেড়ে দিত বাদ পড়লেন মোহাম্মদ মাহবুব আলী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে ফযজুর রহমানের পরিবর্তে মো. এবাদুল করিম বুলবুল মনোনয়ন পেয়েছেন। কুমিল্লা–২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী সেলিমা আহমাদ মেরী। এ আসনের সাংসদ জাপার আমির হোসেন।
চাঁদপুর-১ আসনে প্রার্থীতা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীরের প্রার্থীতা এখনো ঝুলে আছে। তবে তাঁর ঘাড়ে নি:শ্বাস ফেলছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। দুজনকে চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রাম–৯ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। তাঁর আসনে বর্তমান সাংসদ জাপান জিয়াউদ্দিন বাবলু।
কক্সবাজার-৪ আসনে বর্তমান সাংসদ বিতর্কিত আবদুর রহমান বদি। তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে তাঁর স্ত্রী শাহিনা আক্তার চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।