ঢাকা: নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আছে আর মাত্র পাঁচ দিন। কিন্তু কোনো দল বা জোটই এখনো চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেনি।
প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলীয় মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন, সেটা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করেছে দুই দল। কিন্তু আনুষ্ঠানিক প্রকাশ আটকে আছে জোটের সমীকরণ আর পরস্পরের প্রার্থিতা জানার আগ্রহে।
দুই দলের নেতারাই বলছেন, ৩০০ আসনের মধ্যে দেড় শ থেকে দুই শ আসনে প্রতিপক্ষ দলের কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা মোটামুটি আগে থেকেই জানা থাকে। তারপরও তাঁরা সব আসনেই নিজ দলীয় প্রার্থীর প্রতিপক্ষ কে হচ্ছেন সে ব্যাপারে খোঁজ রাখছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, তাঁরা পরস্পরের মনোনয়নের দিকে তাকিয়ে আছেন। কোন আসনে কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন, সেটা নিশ্চিত হয়ে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করবেন, এমন সুযোগের অপেক্ষায় সব পক্ষই। অবশ্য নিজেদের জোটগত আসন ভাগাভাগি এখনো শেষ হয়নি। সেই ভাগ-বাঁটোয়ারায় বাদ পড়তে পারেন দলীয় অনেকেই। দুই দলের দায়িত্বশীল নেতারাই বলছেন, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রার্থী কারা, সেটা জানার চেষ্টা তাঁরা করছেন। বিশেষ করে যেসব আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী কে, সেটা জানাটা জরুরি। দুই দলের দুজন দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, ইতিমধ্যে তাঁরা বিভিন্ন উৎসে কিছুটা জেনেছেন। এটা নির্বাচনের আগে সব সময়ই করা হয়।
অবশ্য ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতারা এও বলছেন, আগে আগে চূড়ান্তভাবে একক প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হলে ক্ষমতাসীনরা ওই প্রার্থীকে নানাভাবে হয়রানি করার সুযোগ পাবে। প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগও নিতে পারে। এসব কথা বিবেচনা করেও বিএনপি কিছুটা দেরিতে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ আগামী ২৫ বা ২৬ নভেম্বর দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারে বলে দলটি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ব্যাপারে কোনো সময়ের কথা এখনো উল্লেখ করেনি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় সূত্রগুলো জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগ থেকে ৪ হাজার ২৩টি ও বিএনপি থেকে হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। দুই দলেরই সাক্ষাৎকার পর্ব শেষে মনোনয়নের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগের প্রায় সব কটি আসনেই কারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন, সেটা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন তারা কোন আসনে ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির কে প্রার্থী হতে পারেন, সে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ তার নিজস্ব ধরনে প্রার্থী বাছাই করে। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়, সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে তাঁর দল। তিনি বলেন, সময়মতোই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সম্পর্কে যেমন খবর রাখে, তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে, তাঁকে কীভাবে ভোটের মাঠে মোকাবিলা করতে হবে, সে সম্পর্কেও তথ্য রাখে।
ঐক্যফ্রন্ট-বিএনপির প্রার্থিতা ও জোটের সমীকরণ খোলাসা হতে আরও বেশ কয়েক দিন লেগে যেতে পারে বলে দাবি বিএনপির একাধিক নেতার। এমনকি সেটা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর পর্যন্ত গড়াতে পারে। এখন পর্যন্ত বিএনপি তাদের মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকেই নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলেছে। পরবর্তীতে নিজেদের জোটের সমীকরণ মিলিয়ে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারে তারা। সে ক্ষেত্রে দুই পক্ষই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চায়।
জাতীয় পার্টি ২ হাজার ৮৬৫টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করলেও সাক্ষাৎকারে ডেকেছিল বাছাই করা ৭৮০ জনকে। কিন্তু সেখানে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলে দিয়েছেন, ৩০০ আসনে তিনিই প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। সবাই যেন তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে দলের পক্ষে কাজ করেন। জোটের বিষয়েও তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
সে হিসেবে ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত বনিবনা হয়নি বলেই ধরে নিচ্ছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ৬৫-৭০ আসন ছাড়তে চাইলেও শরিকদের দাবি আরও বেশি। তবে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, তাদের সংসদীয় বোর্ড দলীয় প্রার্থীদের বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে। ৮-১০টি আসন বাকি আছে, যেগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই চূড়ান্ত করবেন। জোট ও মিত্রদের যেসব আসন নিয়ে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন চান, সেগুলোর ব্যাপারেও তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন। পরে জোটগতভাবেই মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত গণফোরাম ৩৫০টি, জেএসডি ৫৪৭টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৬০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। দলগুলোও জানিয়েছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, দলীয় প্রার্থী বা জোটের প্রার্থী কারা হচ্ছেন, তা কৌশলগত কারণে সুনির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের প্রার্থীরাই নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন। তাঁর দল অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে জিততে পারবেন, এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে। তিনি বলেন, সময়মতোই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।