ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষ করেছে দলটি। টানা ৪ দিন ধরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকারে দলের হাই কমান্ড থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। তবে কোন প্রার্থীকেই গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়নি। সবাইকে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এমনকি দলের পক্ষ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্রও দেয়া হয়েছে। দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- কাকে কোথায় প্রার্থী করা হবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। এই সাক্ষাৎকার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
তবে এবারের জাতীয় নির্বাচন বিএনপির জন্য বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। তাই গত ১০ বছরে সক্রিয় ও দলের ত্যাগী নেতাদেরকেই নমিনেশন দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র মানবজমিনকে জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সমাধান হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এ জন্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের এবার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে একটু বেশি অপেক্ষা করতে হবে। প্রথম দিন সাক্ষাৎকার শেষে কয়েকটি আসনের নেতা মানবজমিনকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। বিভিন্ন নেতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। জানিয়েছেন- নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়ের এক দিন আগে বিএনপির প্রার্থী চুড়ান্ত করা হতে পারে। তখন ধানের শীষ প্রতীক প্রাপ্ত নেতা ছাড়া বাকি সবাইকে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে সবাইকে মাঠে নেমে নির্বাচনের প্রচারণায় কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন কোনভাবেই এই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়া যাবেনা। নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ এই নির্বাচনে জিতলে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।
এদিকে বুধবার সকাল ১০টার কিছু পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের (সাংগঠনিক) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দিয়ে শেষ দিনের সাক্ষাৎকার শুরু হয়। এরপর বিকাল তিনটার পর ঢাকা বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকার শেষে নেত্রকোণা-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আরিফা জেসমিন নাহিন মানবজমিনকে বলেন, সাক্ষাৎকারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বক্তব্য রাখেন। তিনি নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ করান মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরকে। তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারের শুরুতে জানতে চেয়েছেন আপনারা কেমন আছেন? জবাবে আমি বলেছি আমরা ভালো নেই। কেন ভালো নেই জানতে চাইলে বলেছি আমাদের মা জেলে। তাই বাইরে আমরা ভালো নেই। তখন তিনি বলেন, মায়ের মুক্তির জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হবে। পারবেন? আমরা বলেছি অবশ্যই পারব। এর পর তিনি বলেছেন, আপনারা সবাই যোগ্য। নিজেকে যোগ্য মনে করেন বলেই এখানে এসেছেন। এই নির্বাচন গণতন্ত্রের মুক্তি ও আমাদের মায়ের মুক্তির নির্বাচন। এতে একজনকে প্রার্থী করা হবে। সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। পারবেন কিনা? পারলে এখনই ওয়াদা করতে হবে। তখন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। টাঙ্গাইল-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড. ফরহাদ ইকবাল মানবজমিনকে বলেন, সাক্ষাৎকার সরাসরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রহণ করেছেন। তিনি দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছেন। বলেছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। সবাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষ প্রতীকের জন্য কাজ করতে হবে।
এর আগে ১২ থেকে ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি করে বিএনপি। দলটি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ৪ হাজার ৫৮০ মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে। গত ১৮ই নভেম্বর থেকে প্রথম দিনের স্বাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু করে বিএনপি। বুধবার রাতে এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষ হয়। মনোনয়ন বোর্ডে আরো ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এদিকে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে শেষ দিনের সাক্ষাৎকারেও গুলশান অফিসের সামনে নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। আশপাশের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যেন অনুসারীদের নিয়ে না আসেন এমন নির্দেশনা দেয়া হয় দল থেকে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ঘোষণা দেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সঙ্গে কর্মী বাহিনী নিয়ে আসলে তাদের দলীয় নমিনেশন দেয়া হবে না। তবে সকল নির্দেশনা উপেক্ষা করে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সমানে দেখা যায় নেতাকর্মীদের ভীড়। সাক্ষাৎকার গ্রহণের শেষ দিনে এই ভীড় মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। নেতাকর্মীদের চাপে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের পুরো ৮৬ নম্বর রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে খাবারের বিরতির সময় ভীড় একটু কম থাকলেও বিকালে ঢাকা মহানগরের আসনগুলোর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শুরু হলে কার্যালয়ের সামনে ও ৮৬ নম্বর রাস্তায় তিল ধারনের ঠায় ছিল না। অন্যদিকে ৮৬ নম্বর সড়কের দুই পাশে পুলিশের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া, শেষ দিন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা শেষ দিন তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গুলশান কার্যালয়ের সামনে শো–ডাউন করেন। অধিকাংশ নেতার সঙ্গে আগত নেতাকর্মীরা তার পক্ষে স্লোগান দেন। পরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলা থেকে মাইকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হুশিয়ার করেন। বলেন, কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শো–ডাউন বন্ধ করুন। মূল রাস্তা ছেড়ে দিয়ে পাশের গলিতে অবস্থান করুন।