গাজীপুর: গাজীপুর জেলার ৫টি আসনের তিনটি আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের হিড়িক পড়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপি, দলের কেন্দ্রীয় নেতা। আবার দলে কোনো পদ-পদবি নেই, এমন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীও রয়েছেন। মনোনয়ন দেয়ার আগ মুহূর্তে হঠৎ করেই দলে ভিড়ানো হয়েছে দলের একজন সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীকে। জেলার একটি আসনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত ও অপর দুটি আসনে মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত বলা যায়। ২০-দলীয় জোটে নির্বাচন করে বিএনপিকে অতীতে এ জেলার একটি আসনও ছাড় দিতে হয়নি শরিক দলকে। কিন্তু এবার কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল সিদ্দিকীকে হয়ত শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিতে হবে গাজীপুর-৩ আসন। দলে-জোটে, বিরোধী জোটে এমনকি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তাদের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের নিয়ে রয়েছে নানামুখী আলোচনা।
গাজীপুর-১ আসনে গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীদের সব হিসাব নিকাশ উল্টে দিচ্ছেন স্থায়ী কমিটি সাবেক সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী।
দল থেকে বের করে দেয়ার পর দলে এবং রাজনীতি মাঠে কিংবা নির্বাচনি এলাকার কোথাও ছিলেন না, জিয়াউর রহমানের আমলের সাবেক এই মন্ত্রী। যদিও নির্বাচনি মাঠে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দলীয় অবস্থান প্রায় সমানে সমান। গত ১০ বছরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বেশ ক’জন নেতা রাজনীতির মাঠে ওঠে এসেছেন সংসদ সদস্য পদে দলীয় মনোনয়নের আশায়। সেই আশা এখন অনেকটাই গুড়েবালির অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীকে দলে ফিরিয়ে নেয়ায় ভোটারদের ও স্থানীয় অনেক নেতার ধারণা তিনিই ধানের শীষের টিকিট পাচ্ছেন এবার গাজীপুর-১ আসনে। সে হিসাবে তার দলীয় মনোনয়ন অনেকটাই চূড়ান্ত বলা হচ্ছে। মনোনয়ন দৌড়ে চৌধুরী তানভীর সিদ্দিকীর পর অবস্থানে রয়েছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল। এ দু’জন ছাড়াও যারা এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন তারা হলেন, জেলা বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার ও সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সুরুজ আহাম্মেদ।
সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রাণকেন্দ্রের আসন গাজীপুর-২। এই আসন থেকে গাজীপুরে বিএনপির সর্বাধিক সংখ্যক নেতা চাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। ধানের শীষের প্রার্থী হতে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম যারা তুলেছেন তাদের এই দীর্ঘ তালিকায় রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নান। হাই প্রোফাইলের এই নেতা সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন নিতে চাচ্ছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার। এই দুজন নেতাই শারীরিকভাবে অসুস্থ। যদিও লাঠিতে ভর দিয়ে দলীয় প্রার্থী হয়ে সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন হাসান উদ্দীন সরকার। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই দুজন নেতা এবার সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন, এমন বিষয় মাথায় রেখে এই আসনে প্রথম সারি থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন স্তরের আরো ১৬ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।
দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী এই প্রার্থীরা হলেন- শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আফজাল হোসেন কায়সার, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি মো. সোহরাব উদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহাম্মেদ, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, মহানগর বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান এলিস, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সরাফত হোসেন খান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নু, মহানগর যুবদল সভাপতি প্রভাষক বশির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ভাট, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ হোসেন হাওলাদার, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আহামেদ সায়মুম, বাসন থানা বিএনপির আহ্বায়ক বশির উদ্দিন বাচ্চু ও সাবেক মেয়র এম এ মান্নানের ছেলে মুন্জুরুল করিম রনি। ঐক্যফ্রন্টের ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ এই আসনে চাচ্ছেন ধানের শীষ।
গাজীপুর-৩ নির্বাচনী এলাকায় সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান আওয়ামী লীগের। আবার এই আসন এলাকায় দলীয় রাজনীতিতে কতৃত্ব ও মনোনয়ন কেন্দ্রীক বিরোধসহ নানা কারনে আওয়ামী লীগে রয়েছে দুটি ধারা। এই অবস্থার মধ্যে এই আসনটিতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিসহ কয়েকজন মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পীরজাদা এস এম রুহুল আমিন, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইজাদুর রহমান মিলন, উপজেলা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান ফকির, জেলা ছাত্রদলেল সাবেক সভাপতি আব্দুল মোতালিব, বিএনপি নেতা সিরাজ উদ্দিন কাইয়া, জেলা বিএনপি নেতা কুতুব উদ্দিন চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন স্বপ্না। তবে এই আসনে বিএনপির রাজনৈতিক দুর্বলতা ও ঐক্যফ্রন্টের আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী অনেকটাই সুবিধা জনক অবস্থায় রয়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। জোটের আসন ভাগাভাগিতে নির্বাচনী ভাগ্য খুলে যেতে পারে অবজারভারের সাবেক সাংবাদিক ও শিশু সংগঠক ইকবাল সিদ্দিকীর।
গাজীপুর-৪ আসন থেকে ৯১ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ। তার মৃত্যুর পর এই আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন হান্নান শাহ’র ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান। তিনি ছাড়া বিএনপির আর কেউ নেই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাই রিয়াজুল হান্নানের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্তই বলা যাচ্ছে। যদিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে একজন নেতা এই আসনে মনোনয়ন চচ্ছেন।
গাজীপুর-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন অনেকটাই চূড়ান্ত বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এই আসনে বিএনপি শক্তিশালী প্রার্থী হচ্ছেন, দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন। যদিও এই আসন থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আহাম্মেদ সাইমুম দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। অন্যদিকে, এই আসনে জোটের শরিক দল কৃষক- শ্রমিক-জনতা লীগের জেলা নেতা অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান তাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।