প্রশ্নের মুখে ইসির কর্তৃত্ব

Slider সারাদেশ


ঢাকা: একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকায় অস্বস্তিতে নির্বাচন কমিশন। সরকারবিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারে পুলিশের অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে ইসিতে এ অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খোঁজখবর নেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় বিব্রত কমিশনও।

এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইসির কর্তৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পুরোপুরি ইসির অধীনে আনার পক্ষে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপেও নির্বাচনকালীন সময়ে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসির অধীনে আনার প্রস্তাব এসেছিল। মাহবুব তালুকদার এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের সভায় উত্থাপন করতে চাইলে তা আমলে নেয়নি ইসি। এ প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী বলে নাকচ করে দেয়া হয় ইসির পক্ষ থেকে।

বাকস্বাধীনতা খর্বের অভিযোগ তুলে ওই সভা বর্জন করেন মাহবুব তালুকদার। গত শনিবার ও রোববার বিএনপির পক্ষ থেকে দুটি আলাদা চিঠি আসে নির্বাচন কমিশনে। তফসিলের পর থেকে দলটির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা ও বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের তালিকা এসব চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।

চিঠিতে পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ পরিস্থিতিতে ইসির হস্তক্ষেপ কামনা করেছে দলটি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তার কারণে অনেকটা বিব্রত ইসি। গত সপ্তাহে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার জন্য শাস্তির কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। নির্বাচন কমিশনাররা প্রায় প্রতিদিনই বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার তালিকার বিষয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, তালিকাটি আমি দেখিনি।

আমরা দেখে সত্যিকারের অর্থে যদি কোনো হয়রানিমূলক মামলা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেবো- যেন হয়রানিমূলক মামলা না করে। কারণ হয়রানিমূলক মামলা করলে নির্বাচনের পরিবেশ কিছুটা হলেও বিনষ্ট হবে। নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংঘর্ষের ঘটনায়ও বিব্রত কমিশন। পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে এজন্য। সম্প্রতি প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের পুলিশ ফোন দিয়ে হরয়ানি করছে গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, কমিশন থেকে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। যদি কেউ এই ধরনের কাজ করেন তাহলে অতি উৎসাহী হয়ে করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের কাছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের তালিকা কিভাবে গেল এটা যদি জিজ্ঞাস করেন তাহলে বলবো, আসলে পুলিশের তালিকা কারও কাছ থেকে নেয়ারই দরকার ছিল না। তালিকা নিয়েছে কিনা আমি জানি না। কারণ নীতিমালায় বলা আছে কাদের আমরা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসার করবো। আমরা যেই তালিকা দিয়েছি সেই প্যানেলের মধ্য থেকেই তাকে নিয়োগ করতে হবে। কে কি তালিকা দিলো তাতে আমাদের যায় আসে না। গতকাল ইসির কাছে অভিযোগ করে বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি অব্যাহত আছে।

সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ উপেক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে বলেও অভিযোগ করে দলটি। সিইসি বরাবর দেয়া অভিযোগে বলা হয়, গত ৮ই নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে রোববার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৭৭৩ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ তালিকা গত ১৫ই নভেম্বর নির্বাচন কমিশন বরাবর দেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে হলেও কমিশনের নির্দেশ উপেক্ষা করে ধারাবাহিকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দেয়া তালিকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেয়া হলো। অবিলম্বে নেতাকর্মীদের মামলা থেকে অব্যাহতিসহ গ্রেপ্তার বন্ধের জন্য সিইসি কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে ১৬ই নভেম্বর সিইসির কাছের ৪৭২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের তালিকা জমা দেয় বিএনপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *