সংসদ ভাঙা ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি বাম জোটের
দাবি মানলে নির্বাচন না মানলে রাজপথ : সেলিম
নিজস্ব প্রতিবেদক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভাঙার দাবি জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারাও। সেই সাথে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গণভবনে বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বাম জোটের সমন্বয়ক জানান, তারা বৈঠকে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ সরকার গঠনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা বলেছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনোভাবেই ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া বিরোধী দলগুলোকে গায়েবি মামলা-হামলার মাধ্যমে যে হয়রানি করা হচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে। রাজবন্দী হিসেবে যারা কারাগারে আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে।
এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বলেছি সরকারি দল নির্বাচনকালীন সময়ে যে সুবিধা ভোগ করবেন, অন্য প্রার্থীদের জন্যও একই সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দেখতে চাই সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সংবিধান সংশোধনের বিষয় তুলে ধরে বাম নেতা সাইফুল হক বলেন, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধান সম্ভব। এ জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হলে সরকার চাইলে তাও করতে পারে। কারণ সংসদে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে বা দাবি-দাওয়া না মানা হলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল হক বলেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন করার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাই। আন্দোলনও করছি। সংলাপও করছি। আশা করছি সরকার একটা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
তিনি আরো বলেন, যদি দাবি মানা হয় তাহলে আমরা নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করব। আর যদি আমাদের দাবি মানা না হয় তাহলে রাজপথই হবে আমাদের ভরসা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোটে, এখন উনি কী করবেন উনিই ভালো বোঝেন।
পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন আমি কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছি না। আগামী ৮ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে সংলাপের সার-সংপে জানাবেন। তার আগে আমি কিছু বলতে চাই না।’
তবে বিরোধীদের আন্দোলনের হুমকির পরিপ্রেেিত ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা করবেন আর আমরা ঘরে বসে ডুগডুগি বাজাব? তা তো হয় না।
সংলাপে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পে নেতৃত্ব দেন জোট নেতা শেখ হাসিনা। বাম গণতান্ত্রিক জোটের ১৬ নেতা যোগ দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো: শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও পলিট ব্যুরো সদস্য হায়দার আকবর খান রনো, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ও আলমগীর হোসেন দুলাল।
এ ছাড়াও ছিলেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মমিনুর রহমান বিশাল, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রণজিৎ কুমার।