জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিতীয় দফা সংলাপ হচ্ছে আজ। বেলা ১১টায় গণভবনে এ বৈঠক হবে।
অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যে। সংবিধানের ভিতরে থেকেই সমাধানের পথ দেখাবে আওয়ামী লীগ। কিছু ছাড় নিয়েই হবে আলোচনা। সাত দফা থেকে সরে এসে তিন প্রস্তাব দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আন্তরিক পরিবেশে খোলামেলা কথা বলবেন নেতারা। ছোট পরিসরে আজকের আলোচনায় মূলত হবে উভয় পক্ষের মধ্যে দরকষাকষি। সংলাপে নিজ নিজ দাবির পক্ষে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি তুলে ধরবেন নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার গণভবনে ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
ওই সভায় তারা সাত দফা এবং ১১টি দাবি তুলে ধরেন। দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার আলোচনায় অনেক বিষয়েরই সমাধান হয়নি। সাংবিধানিক বিষয়গুলো সমাধানে দ্বিতীয় দফা সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রবিবার চিঠি পাঠায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চায় সরকার। এজন্য সংবিধানের ভিতরে থেকে সব ধরনের ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছে তারা। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেন ‘হয়রানি’র শিকার না হন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। গত সংলাপেও তাদের সে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। তারা যেন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় সমানভাবে অংশ নিতে পারে সেজন্য আজকের সংলাপেও তাদের এ বিষয়েসব ধরনের আশ্বাস দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সময় কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলো সরকারের থাকবে না। এর অনেকটাই থাকবে নির্বাচন কমিশনের হাতে। সরকারের হাতে যেসব বিষয় থাকবে সেগুলো সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার কথাই ভাবছে আওয়ামী লীগ। তারা সবকিছুর সমাধান চায় সংবিধানের ভিতরে থেকে। নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় যারা থাকছেন তাদের কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা না নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে সরকার। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ছিল সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের আলোচনায় বসবে না। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের চাওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার কারণেই এ সংলাপ হচ্ছে। এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়েছে। আজ হবে দ্বিতীয় দফা বৈঠক। আজকের বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবি জানালে কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যাবে না আওয়ামী লীগ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনে আসতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে মেনে নিলেই কেবল আগামী নির্বাচনের জন্য গঠিত ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’ থাকার সুযোগ পেতে পারে তারা। সেটিও সাংবিধানিক রূপরেখার মধ্যে থেকে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে হতে হবে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতর দুই ধরনের মত রয়েছে। এক পক্ষ চায় ছাড় দিয়ে হলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনে রাখতে। সে কারণে মন্ত্রিসভার চারজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে দুজন, বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে একজন এবং বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে আরও একজন নতুন নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় যুক্ত হতে পারেন। খোলামেলা কথা হতে পারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়েও। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে তাদের বেশকিছু দাবি ইতিমধ্যে সরকার মেনে নিয়েছে। দ্বিতীয় দফার সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংবিধান অনুযায়ী যৌক্তিক যেসব দাবি জানাবে তা ভেবে দেখবে সরকার। সংবিধানসিদ্ধ কোনো দাবি থাকলে সেগুলো মেনে নেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি তো এ বিষয়ে কিছু বলেনি। প্যারোলে মুক্তি যদি ঐক্যফ্রন্ট চায় তাহলে আলোচনার পথ খোলা আছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হতেই পারে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তিন প্রস্তাব : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজকের সংলাপে বসতে তিন প্রস্তাব দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রথমত, সংবিধান সংশোধন করে নতুন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব। দ্বিতীয়ত, সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ। আরেকটি হলো, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেখেই তার ক্ষমতা হ্রাস করে গুরুত্বপূর্ণ অন্তত চারটি মন্ত্রণালয়ে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া। ওই চার মন্ত্রণালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের যুক্ত করতে হবে। নতুবা সবার কাছে অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। এ নিয়ে গতকাল জনসভা শেষে রাতে মতিঝিলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন। সেখানে তিনটি প্রস্তাবকে এক প্রস্তাবে পরিণত করা হয়। একটিকে আরেকটির বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, সরকারকে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তারা চান, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এজন্য সাত দফার সবকটিই মানতে হবে এমন অবস্থানে এখন নেই ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু সরকার যদি ঐক্যফ্রন্টের যৌক্তিক দাবিগুলো না মেনে নেয়, তবে সাত দফায় অটল থেকেই সংলাপ থেকে বের