ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বিচারবহির্র্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ৪২২ জন। এদের মধ্যে ক্রয়ফায়ারে ৪১৫ জন, গুলিতে ২ জন এবং নির্যাতনে ৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে গুমের শিকার হয়েছে ৭১ জন এবং কারাগারে নিহত হয়েছেন ৫৭ জন। এ তথ্য দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অধিকার। গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তারা এ তথ্য তুলে ধরে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকারের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ঘটনা স্থান পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ১৯ জন, ফেব্রুয়ারীতে ৭ জন, মার্চে ১৮ জন, এপ্রিলে ২৯ জন, মে মাসে ১৫১ জন, জুনে ৫০ জন, জুলাইয়ে ৬৯ জন, আগস্টে ২৪ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৬ জন এবং গতমাসে ১৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন।
সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে নিহত হয়েছে ৮ জন, আহত হয়েছে ২০ জন এবং ১২ জন অপহরণের শিকার হয়েছে। জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭১ জন সাংবাদিক নানাভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে আহত হয়েছেন ৪৪ জন, লাঞ্ছিত হয়েছেন ১৮ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন আরো ৯ জন। প্রথম ১০ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছে ৬৮ জন এবং আহত হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৫ জন। অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৮৫ টি, যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে ১৪৭ জন, এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ২৫টি, গণপিটুনিতে মারা গেছে ৪৫ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মিথ্যা ও বিভ্যান্তিমূলক তথ্য প্রচার, গুজব ছড়ানো, ও সরকার বিরোধী’ পোস্ট দেয়ার কারণে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গতমাসে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অধিকার তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারী বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো এই জোট ক্ষমতায় আসার পর মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। লাগামহীনভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এক ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নেয়া হলেও সমস্ত রাজনৈতিক দলের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধীদল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়নের মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও সভা-সমাবেশের অধিকার লঙ্ঘিত করে নির্বাচনী মাঠে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করেছে। বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে অন্তরীণ রাখা হয়েছে এবং দলটির অগণিত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকি মৃত, গুরুতর অসুস্থ্য কিংবা বিদেশে অবস্থানকারী বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি নতুন রাজনৈতিক জোটের আবির্ভাব ঘটে। এই জোটের অন্যতম সদস্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় ইতিমধ্যে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মইনুল হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে আটক রেখেছে।