ঢাকা: দেশের উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমাদের কোস্ট গার্ড নিরাপদ সমুদ্রাঞ্চল গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল রেডিসনে হেডস অব এশিয়ান কোস্ট গার্ড এজেন্সিস মিটিংয়ের (হ্যাকগাম) একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এই সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন মোট ২২টি সদস্য রাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড প্রধানরা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দুরূহ কাজে নিয়োজিত থাকেন। এ সভার মাধ্যমে হ্যাকগাম সদস্য দেশগুলো তাদের সমুদ্রসীমা আরও নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।’
সমুদ্রের বিশাল জলরাশির তলদেশে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘এ সম্পদ আমরা উত্তোলন করতে সক্ষম হলে আগামী কয়েক প্রজন্ম লাভবান হবে। এ সম্পদের নিরাপদ ও পরিবেশগতভাবে টেকসই উত্তোলন বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’
সামুদ্রিক এলাকায় মাদকদ্রব্য পাচার, অবৈধ অস্ত্রপাচার, মানবপাচার, অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ, জলদুস্যতা, সশস্ত্র ডাকাতি এবং আরও বিভিন্ন রকম অবৈধ কার্যকলাপ সংঘটিত হয়ে থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অপরাধীরাও জড়িত। অপরাধীরা অনেক সময় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে। কাজেই একক দেশের পক্ষে এদের দমন করা সম্ভব নয়। একমাত্র সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এ সকল কর্মকাণ্ড দমন করা সম্ভব এবং এটা অপরিহার্য।’
তিনি মনে করেন, হ্যাকগাম এর মত একটি সংগঠনই পারে সবার অভিজ্ঞতা ও তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে দলগতভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে এসব সামুদ্রিক অপ-তৎপরতা রোধ করে একটি নিরাপদ সমুদ্রসীমা উপহার দিতে।
এ সময় বঙ্গোপসাগরে দেশের মানুষের নানাবিধ স্বার্থ জড়িত রয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের অপর দুই অংশীদার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারিত না থাকায় বিগত চার দশক ধরে আমরা সমুদ্র তলদেশের সম্পদ আহরণে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। জেলে সম্প্র্রদায় মৎস্য আহরণে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। আমাদের মৎস্যসম্পদ অন্য দেশের জেলেরা অবাধে শিকার করেছে। আমরা তা প্রতিকার করতে পারিনি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে আমরা ২০০১ সালে আনক্লস অনুসমর্থন করি। শেষ ক্যাবিনেটে আমরা তা অনুমোদন করে দেই। এর মধ্যে দিয়ে সমুদ্রে আমাদের ন্যায্য অধিকারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।’
তিনি আরও নলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর নিরঙ্কুশ আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা দুইটি বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সুম্পর্ক রেখে সমস্যার সমাধান করি।’
এ ছাড়াও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের যাত্রার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদে আমাদের উত্থাপিত একটি বিলের মাধ্যমে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় বিরোধী দলে থাকাবস্থায় আমরা এ বিলটি উত্থাপন করেছিলাম। বাংলাদেশে এটিই একমাত্র সংস্থা যা বিরোধীদলের উত্থাপিত বিল পাশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাংলাদেশের উপকূলীয় ও সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। একটি অপেক্ষাকৃত নতুন বাহিনী হওয়া সত্ত্বেও তারা দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা প্রদান এবং দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে যথেষ্ট সক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছে।আমরা একটি নিরাপদ সমুদ্রাঞ্চল গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এশীয় অঞ্চলে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে আমাদের সমুদ্রকে নিরাপদ রাখবে- এটাই আমার প্রত্যাশা। এজন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ নেব।’