যেমন আছেন লতিফ সিদ্দিকী

বাংলার আদালত

image_110063_0চিকিৎসকদের পরামর্শ- যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে লতিফ সিদ্দিকীকে। তবে অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে তার রক্তচাপ বেড়ে গেছে। হার্টে ব্লক থাকায় লতিফ সিদ্দিকীর বুকে ব্যথার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। প্রতিদিন পাঁচবার খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। বাসা থেকে পাঠানো ফলমূলও খাচ্ছেন। হাসপাতাল কেবিনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পত্রিকা পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। মাঝে মাঝে চোখ রাখেন টেলিভিশনে। কেবিনেই আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করেন। সোমবার স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কেবিনে বসে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ৫১২ নম্বর ভিআইপি কেবিনে এভাবেই শুয়ে-বসে লতিফ সিদ্দিকীর সময় কাটছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও কারা কর্মকর্তারা।

হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে বিএসএমএমইউ’র পাঁচতলায় ভিআইপি ৫১২ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় কারাগার থেকে তার ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে। বুকে ব্যথা অনুভব করায় শনিবার তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউ’র কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। লতিফ সিদ্দিকীর কেবিনের প্রতিদিনের ভাড়া ৪ হাজার ২৫ টাকা। কেবিনের ভেতরে পাহারায় আছেন দুই কারারক্ষী। দরজার সামনে পাঁচ থেকে ছয়জনের একটি পুলিশ দল। করিডোরের প্রবেশমুখে আছেন আনসারের দুই সদস্য। আর ভবনের নিচে অবস্থান করছেন আরও ৮ থেকে ১০ পুলিশ সদস্য। অন্যান্য কেবিনে থাকা রোগীদের স্বজন সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এভাবেই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে রাখা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী  জানান, ডিভিশন অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকী সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আর চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারা বিধি মেনে তার সঙ্গে স্বজনরা দেখা করছেন। সোমবার লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তার স্ত্রী দেখা করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালে লতিফ সিদ্দিকীর সময় কাটছে শুয়ে-বসে। লতিফ সিদ্দিকীর হার্টে আগে থেকেই রিং পরানো ছিল। বিতর্কিত মন্তব্য করে গ্রেফতারের পর অনেকটাই দিশেহারা এখন তিনি। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তার আগে থেকেই ছিল। কারা অভ্যন্তরে থাকাবস্থায় তা আরও বেড়ে গেছে। ৭৭ বছর অতিক্রম করা লতিফ সিদ্দিকীকে বার্ধক্যজনিত রোগেও পেয়ে বসেছে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে তার রক্তচাপ বেড়ে গেছে। তার হার্টে আগে বস্নক ধরা পড়ায় বুকে ব্যথার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ওষুধপত্র প্রয়োগ করেও রক্তচাপ স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন যতটা পারা যায় টেনশনমুক্ত থাকতে। সে চেষ্টাও করছেন তিনি। পত্রিকার বিভিন্ন সংবাদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন। কখনও বা চোখ রাখছেন টেলিভিশনের পর্দায়।

লতিফ সিদ্দিকী বিএসএমএমইউ’র কার্ডিওলজির ইউনিট প্রধান অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জির অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ভর্তি হওয়ার পর থেকে লতিফ সিদ্দিকী হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা খাবার খাচ্ছেন। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিয়মিত নানা ধরনের ফলমূল সরবরাহ করা হচ্ছে। বাসা থেকে সরবরাহ করা তিন বেলা খাবার খেতে চাইলে হাসপাতাল ও জেল কর্তৃপক্ষের যৌথ অনুমতি নিতে হবে।

কারা কর্মকর্তা বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী ভিআইপি কেবিনে রয়েছেন। এসব কেবিনে অন্য কেবিনের চেয়ে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। দিনে পাঁচবার খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে তাকে। সকালে রুটি-ডিম-সবজি, বেলা ১১টার দিকে বিস্কুট-চা, দুপুরে ভাত-মাছ-ডাল-সবজি, বিকালে স্যুপ, রাতে ভাত বা রুটি, মুরগির মাংস বা মাছ-ডাল ও সবজি পরিবেশন করা হয়। লতিফ সিদ্দিকী হাসপাতালের সরবরাহ করা এসব খাবারই খাচ্ছেন।

বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল মজিদ ভূইয়া বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা ও ওষুধ-পথ্যের বিষয়গুলো তদারক করছে। নিয়ম অনুযায়ী সব করা হচ্ছে। বাকি নিরাপত্তাসহ লোকজন দেখা করতে পারবে কি পারবে না- তা কারা কর্তৃপক্ষের বিষয়।

২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ইসলামী দলগুলো আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেয়। এ অবস্থায় টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে। পরে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এ সদস্যকে। এ ঘটনার পর লতিফ সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত হয়ে ২৩ নভেম্বর রাতে ঢাকায় আসেন। দুই দিন আত্মগোপনে থাকার পর ২৫ নভেম্বর ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেন। ওই দিনই তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সূত্র: আলোকিত বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *