টাঙ্গাইল:দলীয় মনোনয়ন কে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলে পন্ড হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনির জনসভা। গোপালপুর পৌর শহরে জুতা মিছিল বের করেছে উত্তেজিত দলীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়াও গোপালপুর ও ভূঞাপুরে নির্মিত তোরণ ও বিলবোর্ড ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় এমপি ও তার ছেলের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এই অবস্থায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় শুক্রবার মধ্যরাতে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দীপু মনির জনসভা। কয়েকদফা পিছিয়ে আজ দুপুরে এই জনসভা করার কথা ছিলো।
সরজমিনে জানা যায়, গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে গত ১৩ই অক্টোবর উপজেলার হেমনগর কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভা আহবান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি করা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান তার পুত্র খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলকে ওই জনসভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে দু’উপজেলাতেই। তখন থেকেই ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তানভীর হাসান ছোট মনির, ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ও খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতির লোকজনের মাঝে। পরে ওই তারিখ পরিবর্তন করে ১৬ই অক্টোবর এবং পরবর্তীতে ১৯ই অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দূর্গা পুজার দশমীর কারণে আবারো পিছিয়ে ওই জনসভা পরদিন শনিবার (আজ) দুপুর ২টায় করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগ কোন্দল নিরসন করতে অপারগতা প্রকাশ করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মতি ছাড়াই স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের একক সিদ্ধান্তে শনিবার জনসভার দিন ঘোষণা দেয়া হয়। এতে আওয়ামী লীগের অপর চার মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাদের অনুসারি নেতাকর্মীরা শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালপুর পৌর শহরে জুতা মিছিল বের করে।
এছাড়াও গোপালপুর ও ভূঞাপুরে নির্মিত তোরণ ও বিলবোর্ড ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাহ করা হয় এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান ও তার ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের কুশপুত্তলিকা। মঞ্চ পাহারায় নিয়োজিত রাখা হয় পুলিশ। সন্ধ্যার পর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে থাকে। দেখা দেয় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা। পরে অবস্থার বেগতিক দেখে মধ্যরাতে বন্ধ হয়ে যায় দীপু মনির জনসভা।
এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও গোপালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান নিজ পুত্র মশিউজ্জামান রোমেলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য কৌশলে এ জনসভার আয়োজন করেছে। জনগণ এ ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না। তাই এ জনসভাকে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রত্যাখান করেছে।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনি বলেন, এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে নিজের অযোগ্য পুত্রকে দলের প্রার্থী হিসেবে কৌশলে ঘোষণা দেয়ার জন্য একজন কেন্দ্রীয় নেত্রীকে ভুল বুঝিয়ে শনিবার জনসভার আয়োজন করে। জনগণ এ ষড়যন্ত্রমূলক জনসভাকে প্রত্যাখান করেছে।
গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হালিমুজ্জামান তালুকদার জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এ জনসভা চাপিয়ে দিয়েছে। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সন্ধ্যায় তারা সংসদ সদস্য ও তার পুত্রের বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করেছে। জনসভা পন্ডের বিষয়ে কথা বলতে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের সেল ফোনে বার বার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন বলেন, জনসভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছিল। কিন্তু আয়োজকরা স্বেচ্ছায় তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।