ঢাকা: কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে(সাবেক পিজি হাসপাতাল) স্থানান্তর করা হয়েছে। শনিবার দুপুরের পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পুরান ঢাকার কারাগার থেকে শাহবাগের হাসপাতালটিতে নেয়া হয় বেগম জিয়াকে।
এদিন দুপুর ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে তাকে বহনকারী গাড়ি প্রবেশ করে হাসপাতালে। এর আগে শনিবার সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কেবিন ব্লকের দুটি ভিআইপি কেবিন প্রস্তুত করা হয় বেগম জিয়ার জন্য। বিকালে খালেদাকে আনার আগে দুপুরে তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র হাসপাতালে আনা হয়।
প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেই খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। এসময় হাসপাতালের গেটে অপেক্ষমান ছিলেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসক ও দলটির অনেক নেতাকর্মী। তবে তাদের কাউকেই হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) ভিআইপি কেবিন ডিলাক্স ৬১১ নম্বর কেবিন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
শনিবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১টায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কেবিন ব্লকের ষষ্ঠ তলায় ঘুরে দেখা গেছে, ৬১১ নম্বর ভিআইপি কেবিন ডিলাক্সের সামনে কারা পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া পরিচ্ছন্ন কর্মীকে ৬১১ কেবিনে ধোয়া মোছা করতে দেখা যায়। ৬১২ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে খালেদা জিয়ার জায়নামাজসহ ব্যবহার সামগ্রী।
খালেদা জিয়াকে এখানে ভর্তি করা হবে বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। ষষ্ঠ তলায় এই কেবিনের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরার কেবল স্থাপন করতে দেখা গেছে। এদিকে হাসপাতাল চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আজ শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হচেছ। কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
অন্যদিকে ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে নতুন করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই মেডিকেল বোর্ডে নতুন করে তিনজন চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। তবে তারা বিএনপিপন্থী চিকিসকদের সংগঠন ড্যাব ও আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ের সদস্য হতে পারবেন না।
মেডিকেল বোর্ডের অপর দুই সদস্য হিসেবে আগের বোর্ডের সদস্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী ও ডা. বদরুন্নেসাকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তার পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোকলজিস্ট ও টেকনোলজিস্ট নিতে পারবেন। এ ছাড়া প্রয়োজনে খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের অনুমতিক্রমে এর বাইরে থেকেও চিকিৎসক আনতে পারবেন।
খালেদা জিয়া যেহেতু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাই তাকে জেল কর্তৃপক্ষ এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে মানসম্মত চিকিৎসা দিতে বলেছেন আদালত।
শুক্রবার সকালে এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা রাতে আমরা পেয়েছি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ কখন আনবে, এ বিষয়টি এখনো আমাদের জানানো হয়নি।’
এর আগে দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত ৯ সেপ্টেম্বর রিটটি দায়ের করা হয়। রিটের শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, পাঁচ সদস্যের চিকিৎসকদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাই তাদের কাছ থেকে খালেদা জিয়া নিরপক্ষে চিকিৎসা পাবেন না বলে আইনজীবীরা আদালতকে অবহিত করেন। এরপর দুদিনব্যাপী শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন।
এদিকে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। শনিবার দুপুরে তারা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এছাড়া বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদেরও পুলিশ বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের গেটের কাছে ভিড়তে দিচ্ছে না বলে জানা গেছে। অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন সহ আরো দশ বারো জন বিএনপিপন্থী চিকিৎসক প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের গেটের কাছ থেকেই দূরে সরিয়ে দেয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।