২৫ লাখ নেতা-কর্মী আসামী!

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


ঢাকা:একটা রাজনৈতিক দলের ২৫ লাখ ৭০ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা! মাত্র ৯ বছরে ৯০ হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে। মামলা থেকে বাদ যাননি স্বয়ং দলের চেয়ারপারসনসহ বর্ষীয়ান নেতারাও। এমনকি মিথ্যা মামলার অপবাদ নিয়ে মারা গেছেন অনেক সিনিয়র নেতারা। মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে মারা যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ। কারাগারে মারা যান ছাত্রদলের নিবেদিত বেশ কয়েকজন নেতা।

আজ শনিবার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত গায়েবী মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৯। এর মধ্যে এজহারের জ্ঞাত আসামীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৬৯২ এবং অজ্ঞাত আসামী হচ্ছে ২ লাখ ৭৬ হাজারর ২৭৭ জন।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, এটা থেকে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয় সরকার সম্ভাব্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে, যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না পারে। দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটক করে রাখা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত করে রাখা এবং আমাদের সিনিয়র নেতাদের মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে তাদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার একটা প্রক্রিয়া তারা(সরকার) বের করতে পারে।

এরকম পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য অনুকুল নয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের জনগন একটা নির্বাচন চায়। কেনো চায়? তারা এই অবস্থার পরিবর্তন চায়। সেই সেই নির্বাচনে যেন বিরোধী দল অংশগ্রহণ করতে না পারে তার জন্য সবরকম অবস্থা তারা তৈরি করে রাখছে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা যে ৭ দফা দিয়েছি তা মেনে নিয়ে একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গায়েবী মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গায়েবী মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৪ জন। রিমান্ডে গেছে ২৪৭ জন। আমাদের দক্ষিনের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল এখনো রিমান্ডে আছেন। একটার পর একটা রিমান্ড তার চলছে। ২০০৯ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসামীর সংখ্যা অবিশ্বাস্য। কেউ বিশ্বাস করবে না। ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জন, জেল হাজতে আসামী সংখ্যা ৭৫ হাজার ৯২৫ জন, মোট হত্যার সংখ্যার ১ হাজার ৫১২ জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিএনপির নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার সংখ্যা ৭৮২ জন। মোট গুমের সংখ্যা ১ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে পরবর্তিকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ৭৮১ জন এবং গুম হয়ে আছে এখন ৪২৩ জন। ২০০৯ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুরুতর জখম ও আহত হয়েছে ১০ হাজার ১২৬ জন। এসব সব আমাদের কাছে রেকর্ডেড। এর বাইরেও আছে যা রেকর্ডেড হয়নি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিদেশে দেশে তারা সবাই বক্তৃতা করার সময়ে বলছেন যে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এবং লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড থাকবে সবাই নির্বাচন করতে পারবে। এই পরিসংখ্যানে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয় সরকার সব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে। আমরা মনে করি এটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, বিরোধী দলগুলোর জন্য নয় এটা সমগ্র জাতির জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ, বিপদজনক। কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে। আবার আগের নাটক শুরু হয়ে গেছে। মীরসরাইতে জঙ্গি আস্তানা। এই আলামত কিসের কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে। কোন দিকে কোন উদ্দেশ্যে জাতিকে নিয়ে যেতে চায় এটা আমাদের কাছে বড় আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখার জন্য এইভাবে গায়েবী মামলা দিচ্ছে। উদ্দেশ্যে আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটা একতরফা নির্বাচন করা। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই যে, এইভাবে নির্বাচনের আগে সরকার নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে। যেটা বাংলাদেশকে সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব কর্মকান্ড করছে। গত ১০ বছরে নিজের অপকর্মের কারণেই তারা আতঙ্কিত হয়ে এসব কাজ করছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এভাবে কোনো ভিত্তি ছাড়া মামলায় দায়ের করে সরকার দেশে ন্যায় সুবিচার ও সুবিচার বলতে যা বুঝায় তা একেবারেই নিঃশেষ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের আপামর জনগনকে আপনারা হেয় প্রতিপন্ন করছেন। আপনাদের যে দেশের মানুষের প্রতি কোনো আস্থা নাই যেটাই প্রমাণ করছেন এসব কর্মের মাধ্যমে। সরকারের উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের আগে ওয়ার্ড লেভেল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের কারাগারে বন্দি করে রাখা। তারা চাচ্ছেন ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *