বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি বলেন, “৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণ বর্জন করেছে। এখন তারা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় বসে আছে। নির্বাচন দিতে চায় না। তারা জানে নির্বাচন হলে নিজেদের জামানতই থাকবে না।
“এখন আমাদের একটাই কাজ- এই দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচার সরকার, যারা পাথরের মতো জনগণের ওপর চেপে বসে আছে। এদের সরাতে হবে। সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দূর্বার আন্দোলনে নামতে হবে।’’
দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সেমিনার কক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের একের পর এক মামলা দিচ্ছে। গতকাল (মঙ্গলবার) আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানহানি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
“কেবল তাই নয়, ড. তুহিন মালিক মতো আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ, তিনি সংবিধান ও তাদের (আওয়ামী লীগ) নেতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এভাবে আমরা যারাই কথা বলছি, তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে।”
তারেক রহমানকে সরকার ভয় পায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে কেবল মানহানির মামলাই নয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ অনেক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
“তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে সম্ভাবনাময় একজন নেতা। এই ভয়ে তিনি (তারেক) যাতে রাজনীতিতে আসতে না পারেন সেজন্য তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।”
মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণের জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, একদিকে সরকার দাবি করছে, দেশে গণতান্ত্রিক সমাজ চালু আছে। অন্যদিকে কথা বলার অপরাধে একের পর এক মামলা হচ্ছে।
“একজন তরুণকে শুধু কথা বলার জন্য, ফেইস বুকে প্যারোডি লেখার জন্য ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে । একটু মন্তব্য করার জন্য একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কার্টুন আঁকার জন্য মামলা হয়েছে। এই হচ্ছে আমাদের কথা বলার স্বাধীনতার বর্তমান অবস্থা। আমরা সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই।”
একই সঙ্গে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানি মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
দলের বিভিন্ন কমিটিতে নারীদের নেতৃত্বে আনার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “আমরা নারীদের দলের বিভিন্ন স্তরে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ৪৩টি জেলায় সম্মেলনে কমিটি হয়েছে। এতে ২১ ভাগ নারী নেতৃত্বকে স্থান দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী তিন বছরের মধ্যে দলের নেতৃত্বে শতকরা ২০ ভাগ নারী নেতৃত্বে উঠে আসবে।”
বিএনপিকে ‘নারীবান্ধব দল’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “নারীদের উন্নয়নে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি পদক্ষেপ নিয়েছেন। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক নারী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যুগান্তকারী পদক্ষেপ বেগম জিয়াই করেছেন।
“যারা বিএনপিকে নারী বন্ধব দল নয় বলে অপপ্রচার করছে, তারা কারা বুঝতে হবে। এরা হচ্ছে ওই গোষ্ঠী যারা বিএনপিকে মৌলবাদী দল বলে। বিএনপি-জামায়াত ব্র্যাকেট করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে।’’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীদের অবস্থা ভালো নয়। ১৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে মাত্র দুই জন নারী। এর মধ্যে একজন রাজিয়া ফয়েজ মারা গেছেন। যুগ্ম মহাসচিব ৭ জনরের মধ্যে কোনো নারী নেই। অর্থাৎ এসব স্তরে নারীদের সংখ্যা ৭ দশমিক ৭ ভাগের নিচে। একইভাবে ২৬৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটির মধ্যে মাত্র ৩১ জন নারী। এর অনুপাতও কোনো ক্রমের ১১ ভাগে আসেনি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “নারীরা রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে উঠলেও তাদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচত করে তাদের কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয় না, উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয় না।
“এভাবেই রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক দল নারীদের অকার্য্কর করে রাখতে চায়। যতদিন নারীদের দাবিয়ে রাখার মানসিকতা পরিহার করা হবে না, ততদিন দেশ ও জাতির উন্নয়ন ঘটবে না।’’
গাজীপুরের শ্রীপুরের নেত্রী শেখ ফরিদা জাহান বলেন, “আমি নিজেই স্থানীয় নির্বাচনে এক লাখ ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আমাদের দাবি- আমরা সংরক্ষিত আসনে আর বন্দি থাকতে চাই না। ১০০ আসনে মহিলা দলকে সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে।”
মানিকগঞ্জের নেত্রী রুখসানা খানম মিতু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের উদ্দেশ্যে বলেন, “মহিলা দলকে বিএনপি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না। জেলা কমিটিতে আমাদের স্থান দেওয়া হয় না। আমরা প্রতিটি জেলা কমিটিতে ৩৩ ভাগ নারী নেতৃত্ব চাই। আমরা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছ থেকে সৎ ভাইয়ের মতো আচরণ চাই না, আপন ভাইয়ের মতো ব্যবহার আশা করি।”
মেহেরপুরের রুমানা আখতার বলেন, “মহিলা দলের নেত্রীদের সরাসরি আসনে নির্বাচন করতে দল তেমন উৎসাহ দেওয়া হয় না। কেউ সরাসরি নির্বাচন করতে চাইলে তাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। বলা হয়, মহিলা মানুষ কি নির্বাচন করবেন, টাকায় কোখায় পাবেন ইত্যাদি।”
সংগঠনের সভানেত্রী নুরে আরা সাফার সভাপতিত্বে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সভানেত্রী শ্যামা ওবায়েদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহসভাপতি রাবেয়া সিরাজ, জেলা নেতাদের মধ্যে বরগুনার রিমা জামান, মেহেরপুরের রুমানা আখতার, কুমিল্লার শেফালী বেগম, বগুড়ার লাভলী রহমান, সিলেটের সামিয়া চৌধুরী, ঠাকুরগাঁওয়ের ফোরাতুন নাহার ও শেরপুরের আশরাফুন্নাহার রুবী।