জাতীয় গ্রিডে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যোগ হলেও ঢাকার গ্যাস-সংকটের উন্নতি হয়নি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনে তো বটেই, অনেক এলাকায় রাতেও চুলা জ্বলে না।
তিতাস গ্যাস সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিডে যে পরিমাণ এলএনজি যুক্ত হবে, তার সমপরিমাণ গ্যাস ঢাকায় সরবরাহ করার কথা। অর্থাৎ জাতীয় গ্রিডে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর ঢাকায় আরও ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসার কথা। কিন্তু যুক্ত হয়েছে মাত্র ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
অবশ্য এলএনজি আসার পর ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে ভিন্ন বক্তব্যও আছে। পেট্রোবাংলার এলএনজি সেল থেকে বলা হয়েছে, এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট।
২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ঢাকার গ্যাস ঘাটতি প্রতিদিন প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি সরবরাহ শুরু হলে ঢাকায় গ্যাস-সংকট কমবে বলে এত দিন আশ্বাস দিয়ে আসছিল তিতাস গ্যাস কোম্পানি। গত মাসের মাঝামাঝি জাতীয় গ্রিডে প্রাথমিকভাবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যুক্ত হয়।
তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় গ্রিডে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর আমরা শুধু ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হলেও ঢাকায় চলমান গ্যাস-সংকটের খুব একটা উন্নতি করা যাচ্ছে না। কারণ, এখনো পর্যন্ত ঘাটতি অনেক।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যুক্ত হওয়ার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। পুরান ঢাকার গোয়ালনগরে গত সোমবার সকাল সাতটা থেকে বিকেল প্রায় চারটা পর্যন্ত গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলেনি। এরপর গ্যাস এলেও চুলায় আঁচ ছিল খুবই কম।
গোয়ালনগরের বাসিন্দা সুদীপ ঘোষ বলেন, ‘মনে হচ্ছে গ্যাসের সমস্যা আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। রাতে গ্যাস থাকলেও চাপ থাকে কম।’
কাজী আলাউদ্দিন রোডেও গত সোমবার সারা দিন ঠিকভাবে চুলা জ্বলেনি। এলাকার বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, আগে যেমন সকাল আটটার পর থেকে এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে যেত, এখনো তাই হচ্ছে।
জানা গেছে, গ্যাসের স্বল্প চাপজনিত সমস্যা আগের মতোই রয়ে গেছে গোপীবাগ, স্বামীবাগ, পোস্তগোলা, রাজার দেউড়ি, রাধিকামোহন বসাক লেন, লালবাগ, সোয়ারীঘাট, কামরাঙ্গীরচর; মধ্য ঢাকার শান্তিনগর, শান্তিবাগ, মধুবাগ, মালিবাগ, কাঁঠালবাগান ফ্রি-স্কুল স্ট্রিট, গোড়ান, বাসাবো ও মাদারটেকের কিছু অংশে। সূত্রাপুর এস কে দাস রোড, মালাকার টোলা, গেন্ডারিয়া ও আশপাশের এলাকায় মাঝেমধ্যে রাতের বেলায়ও গ্যাস থাকছে না।
গ্যাস-সংকটে নারিন্দা এলাকায় অনেক বাড়িতে কেরোসিনের চুলায় রান্না হয়। ঢাকার অন্য প্রান্ত দক্ষিণখানের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অনেক সময় রাতের বেলায়ও চুলায় আঁচ থাকে না।
পেট্রোবাংলার এলএনজি সেলের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, মোট ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পাওয়ার কথা থাকলেও আপাতত ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি পাওয়া যাবে না। কারণ, কর্ণফুলী নদী ক্রসিং পাইপলাইন এখনো হয়নি।
কাতার থেকে জাহাজে করে এলএনজি আমদানি করা হয়। পরে তা মহেশখালীর টার্মিনাল দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে যুক্ত হয় মূল গ্রিডে। তবে ঢাকায় এলএনজি গ্যাস সরাসরি যুক্ত হচ্ছে না।