ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। দলের প্রয়োজনে রঙিন জার্সিতে তিনি যতটা বিধ্বংসী, সাদা পেশাকে আবার ততটাই ধৈয্যশীল।
ধারাবাহিক নৈপুণ্যে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার। তবে এবার এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক হাতে ব্যাট করে নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়। একই সঙ্গে অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন বাংলাদেশের তারকা ওপেনার তামিম ইকবাল।
ইনিংসের শুরুতে বাঁ-হাতে কব্জিতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। পরবর্তীতে ইনিংসের শেষ দিকে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আবারও ক্রিজে গিয়ে এক হাতে একটি বল মোকাবেলা করেন তিনি। ২২ গজে তামিমের এমন কীর্তি দেখে বিস্মিত ক্রিকেট বিশ্ব। এক হাতে ব্যাট করার পেছনে আসল রহস্য কি ছিল!
এমন কৌতুহল প্রশ্নের উত্তর পরে জানা গেছে তামিমের মুখে, ‘গ্যালারির চিৎকার আমার মনের সাহস বাড়িয়ে দেয়। শেষ উইকেটে মুশফিক সেট হয়ে থাকায় দলের রান আরও বাড়াতে আমি মাঠে নামার সাহস পাই। ’
এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ১৪তম আসরের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলো বাংলাদেশ।
ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ দু’বলে দুই উইকেট হারায় টাইগাররা। দ্বিতীয় ওভারে তামিমকেও প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়। তবে আউট হয়ে নয়, শ্রীলঙ্কার ডান-হাতি পেসার সুরাঙ্গা লাকমলের বলে বাঁ-হাতে কব্জিতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। এসময় ৩ বলে ২ রান করেন তিনি।
হাতে ব্যথা নিয়ে মাঠ ত্যাগ করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে যান তামিম। সেখান থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে আবারো ড্রেসিংরুমে ফিরেন তিনি। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বাঁ-হাতের আঙ্গুল থেকে কনুই পর্যন্ত ব্যান্ডেজ পেচিয়ে খেলা উপভোগ করছেন তামিম। এ অবস্থায় তার ব্যাট করার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ ইনিংসের ৪৭তম ওভারের শেষ বলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে যান তামিম।
তামিমের লক্ষ্য ছিল- সেঞ্চুরি তুলে উইকেটে সেট হয়ে থাকা মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গ দেয়া। কিন্তু এ অবস্থায় কিভাবে ব্যাট করবেন তামিম!
ইনজুরি অবস্থায় কিভাবে ব্যাট করবেন, সেটি স্ট্রাইকে গিয়ে দেখিয়েছেন তামিম। এক হাতে ব্যাট করে প্রতিপক্ষ বোলারের শেষ ডেলিভারি সামাল দেন তামিম। ফলে ওভার শেষ হওয়ায় পরের ওভারের স্ট্রাইক পান মুশফিকুর। তাই এই সুযোগে দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশের স্কোর ২৬১ রানে নিয়ে যান মুশফিক। অর্থাৎ তামিম-মুশফিক জুটি শেষ উইকেটে ৩২ রান যোগ করে। তবে সবক’টি রান নিয়েছেন মুশি। এতেই একটি বিশ্বরেকর্ড গড়েন তামিম-মুশফিকুর। ওপেনারের উপস্থিতিতে শেষ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি।
তবে কি মনে করে হাতে ইনজুরি থাকায় অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে ইনিংসে দ্বিতীয়বার ব্যাট হাতে নামলেন তামিম!! এমন কৌতুহল বাংলাদেশের ইনিংস শেষে সর্বত্রই ছিলো। অবশেষে ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে তামিম নিজে জানালেন দ্বিতীয়বার ব্যাট হাতে নামার গল্প।
তিনি বলেন, ‘গ্যালারির গর্জন শুনে ওই সময় সাহস অনেক বেড়ে গিয়েছিল। মনে মনে ঠিক করেছিলাম, যা হবার হবে দেশ ও দলের জন্য নিজের সেরাটা দিতে হবে। আমি দল ও জাতির প্রতি খুব বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম। ব্যাপারটা খুব ঝুঁকির ছিল। কারণ, এক হাতে ব্যাট করার সময় ব্যাথা পাওয়া হাতটি সামনের দিকে চলে আসছিল। বল ব্যাটে না লাগলে ব্যাথা পাওয়া হাতে লাগলে আরও বড় ইনজুরিতে পড়তে হতো আমাকে। সিদ্ধান্তটা আমারই ছিল। ’
দ্বিতীয়বার মাঠে প্রবেশের আগের ঘটনাও তুলে ধরেছেন তামিম। তিনি বলেন, ‘যখন ড্রেসিংরুমে প্যাড পরছিলাম, তখন রুবেল ব্যাট করছিল। আমাকে তৈরি করতে মাশরফি ভাই, মোমিনুল সাহায্য করছিলো। মাশরাফি ভাই গ্লাভসের কেটে হাত ঢুকিয়ে দিচ্ছিলো। আমার জীবনে এই প্রথম কেউ আমাকে গার্ড পড়িয়ে দিয়েছিলো। মোমিনুল প্যাড পড়িয়ে দিয়েছিলো। ড্রেসিংরুমে সবাই আমার পাশে ছিল। ’
তামিম আরও বলেন, ‘তারপরও যখন মাঠে নামলাম তখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি কি করবো। যখন ব্যাটিং-এ গেলাম, বোলারের দৌঁড়ের পর ওই দশ সেকেন্ডে আমার সাহস বেড়ে গিয়েছিলো। ভালোভাবেই একটি বল সামাল দিয়েছিলাম। কেউ আশা করেনি, আমি একটি বল খেলবো এবং অন্যপ্রান্ত দিয়ে মুশফিক ৩২ রান নিয়ে ফেলবে। ’
ইনজুরিতে পড়লেও, এশিয়া কাপে দল হিসেবে ভালো কিছু করার আশা নিয়ে দুবাই এসেছেন, তামিম এমনটাও জানালেন তিনি, ‘এখানে অনেক আশা নিয়ে এসেছি আমরা। একটা বল খেলে দিতে পারলে যদি কিছু রান পাওয়া যায়, তা হলে দলেরই ভাল হবে। এই কথা ভেবেই আমি নেমে পড়ি। তখন আর অন্য কিছুই ভাবিনি। এমন রোমাঞ্চকর ঘটনা আমার ক্রিকেট জীবনে আগে কখনও ঘটেনি। ’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়েছে দ্বিতীয়বার স্ক্যান করার পর রিপোর্ট দেখে তামিমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।