ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলার রায়ের দিন ঘোষণা হতে পারে ১৮ সেপ্টেম্বর। গতকাল বুধবার শুনানি শেষে বিচারক বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর আসামিপক্ষের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে।
আইনগত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ কয়েকটি আইনি প্রশ্নের অস্পষ্টতা দূর করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের ১২ সদস্যের আইনজীবী প্যানেলের অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ সদস্য আকরাম উদ্দিন শ্যামলের ব্যাখ্যায় আদালত সন্তুষ্ট হয়েছেন। অস্পষ্টতা দূর করতে আদালতকে সহায়তা করায় ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-১-এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন তাঁকে ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পাশাপাশি আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহানও তাঁর প্রশংসা করেন।
আইনজীবী আকরাম উদ্দিন বলেন, আইনের ভাষ্য ও ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অধিকতর তদন্তও মূল তদন্তেরই অংশ। মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার আগে, যেকোনো সময় রাষ্ট্রপক্ষ অধিকতর তদন্ত চাইতে পারে। প্রয়োজন মনে করলে আদালত নিজেও অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। মুফতি হান্নানের দ্বিতীয়বার দেওয়া জবানবন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ৪(এল) ধারা অনুযায়ী ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিও তদন্তের অংশ।
আসামিপক্ষ বলেছিল, মুফতি হান্নানকে উদ্ধৃত করে কয়েকজন সাক্ষী যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা তাঁর মুখ থেকে তাঁরা নিজেরা শোনেননি। অর্থাৎ তাঁরা অন্যের কাছ থেকে শোনা কথা বলেছেন, যা আইনত সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ল’ ডিসিশনস (বিএলডি)-এর ১ নম্বর ভলিউমের ১০৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত এস এম কামরুজ্জামান বনাম রাষ্ট্র মামলায় উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে আকরাম উদ্দিন বলেন, ওই শোনা কথার সঙ্গে যদি মামলার ঘটনা ও ফলাফলের মিল পাওয়া যায়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য।
আসামি পাকিস্তানি নাগরিক মাজেদ ভাটের সাবেক স্ত্রী নাহিদ লায়লা কাঁকনের সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও আসামিপক্ষ প্রশ্ন তুলেছিল। তারা বলেছিল, সাক্ষ্য আইনের ১২২ ধারা অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার কথোপকথন আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যা মামলার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে আইনজীবী আকরাম উদ্দিন বলেন, ওই মামলার মূল আসামি বিয়ন্ত সিংয়ের স্ত্রী বিমলা খালসা আদালতে সাক্ষ্যে বলেছিলেন, তিনি তাঁর স্বামীকে অপর আসামি কেয়ার সিংয়ের সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলতে দেখেছেন। এই সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই কেয়ার সিংয়ের শাস্তি হয়। অথচ হত্যাকাণ্ডের সময় কেয়ার সিং ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।
গতকাল প্রথম যুক্তি উপস্থাপন করেন আদালতের বিশেষ পিপি আবু আবদুল্লাহ্ ভূঁইয়া। তারপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান আকরাম উদ্দিনকে উপস্থাপনের সুযোগ দিতে আদালতের অনুমতি নেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনার পর রাষ্ট্রপক্ষে সৈয়দ রেজাউর রহমান আইনগত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন।
এ পর্যায়ে বিচারক ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করে আদালতের কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ সেপ্টেম্বরও তারিখ রাখার অনুরোধ করলে বিচারক বলেন, তার বোধ হয় দরকার হবে না। ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপনা শেষ হওয়ার পরই আসামিপক্ষ তাদের বক্তব্য শুরু করতে পারবে। পরদিন তাদের বক্তব্য শেষ হবে। সুতরাং ধারণা করা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর আসামিপক্ষের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে।