মায়ের মৃত্যুর ভুয়া সনদ দাখিল করে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন অস্ত্র মামলার আত্মস্বীকৃত আসামি জিয়ারুল ইসলাম (৩২)। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার নূরুল্লাপুর গ্রামের জান বক্স প্রামাণিকের ছেলে।
গোয়েন্দা পুলিশ গত বছরের ২৬ নভেম্বর আসামি জিয়ারুলের তথ্যমতে তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করে। ওইদিন থেকে তিনি কারাগারে আটক ছিলেন।
নাটোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি অস্ত্র মামলায় (লালপুর থানার মামলা নং-২৭ তাং-২৬.১১.১৭) লালপুরের নূরুল্লাপুর গ্রামের জান বক্স প্রামাণিক ও বুলুয়ারা বেগম দম্পতির ছেলে জিয়ারুল ইসলাম (৩০) গত বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে নাটোর কারাগারে আটক ছিলেন। তদন্তকালে জিয়ারুল ইসলামকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তিনি বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে অস্ত্র রাখার দায় স্বীকার করেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই কৃষ্ণ মোহন মামলাটি তদন্ত শেষে জিয়ারুল ইসলামসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
জিয়ারুলের পক্ষে ৪ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের শুনানি করেন তার নিয়োজিত আইনজীবী এমরান হোসেন। এ সময় তার মা বুলুয়ারা বেগম ৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন বলে আদালতকে জানানো হয়। আসামির পক্ষ থেকে একটি মৃত্যু সনদপত্র দাখিল করা হয়।
ওই সনদপত্রটিতে সাক্ষর করেছেন লালপুর উপজেলার ২নং পুরাতন ঈশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.আমিনুল ইসলাম জয়। তিনি সনদে উল্লেখ করেন যে, ভাল্ব নষ্ট হয়ে বুলুয়ারা বেগম ৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন। সনদের তথ্য যাচাই করার জন্য সোমবার দুপুরে জিয়ারুলের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় একজন সাংবাদিক তার মা বুলুয়ারা বেগমের সন্ধান জানতে চান। এ সময় বুলুয়ারা বেগম বাড়ি থেকে বের হয়ে তার সাথে কথা বলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সাংবাদিক এই প্রতিনিধিকে জানান, বুলুয়ারা বেগমের মৃত্যু হয়নি। তিনি জীবিত আছেন এবং তার সাথে কথা বলেছেন।
আসামির আইনজীবী এমরান হোসেন জানান, জিয়ারুলের মামলার তদ্বীরকারকরা তাকে ওই সনদপত্র সরবরাহ করেছেন। তিনি সরল মনে তা আদালতে দাখিল করেছেন। এ ব্যাপারে তার ব্যক্তিগত কোনো ধারণা নাই।
মৃত্যু সনদে সাক্ষরকারী চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, কেউ আপনজনের মৃত্যুর সনদ নিতে এসে মিথ্যা কথা বলেন না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তার এই বিশ্বাসের ওপর ভর করে ওই সনদ কেউ নিয়ে যেতে পারে। আমি সনদের তথ্য যাচাই বাছাই করিনি। এটা ভুল হয়ে গেছে। এখন থেকে এ ধরণের ভুল আর হবে না।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সিরাজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি। তিনি ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। আসামিকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত অন্তরবর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়েছে। ওইদিন বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে আসা হবে।