ঢাকা: অনেকদিন পর মুখ খুললেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বহুল আলোচিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে পরিচিত অনুপ চেটিয়া। তিনি আসামে বিজেপি সরকারের গৃহীত নাগরিকপঞ্জী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। করেছেন ব্যাপক সমালোচনা। বলেছেন, এই নাগরিকত্ব বিল অবৈধ অভিবাসী ইস্যুকে শুধুই আরো জটিল করবে। এর মধ্য দিয়ে পরেশ বড়–য়া ও তার অস্ত্রের আহ্বানকে আরো শক্তিশালী করবে। তার একটি সাক্ষাতকার ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের দ্য হিন্দুর বিজনেস লাইন। তাতেই এসব কথা বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, নাগরিকপঞ্জী নিয়ে যতটাই হয়েছে সেখান থেকে পিছনে ফিরে যাওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন উলফা ও এজিপি নেতারা। পূর্ণিমা যোশীর লেখা ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপির জাতীয় পর্যায়ের নেতারা আসামে সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল এনেছেন। এতে আসামের সমাজ ব্যবস্থায় উপ-জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। এতে আরো বলা হয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার উদারপন্থি শাখার প্রধান বর্তমানে অনুপ চেটিয়া। তিনি বিজনেস লাইনকে বলেছেন, এই বিল ‘পরেশ বড়–য়ার হাতকে শক্তিশালী করবে। তিনি অস্ত্রের জন্য যে আহ্বান জানিয়েছেন তাকে শক্তিশালী করবে। এখানে উল্লেখ্য, ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম যার সংক্ষিপ্ত নাম উলফা তা এখন নিষিদ্ধ। এই শাখার প্রধান হলেন পরেশ বড়–য়া।
অনুপ চেটিয়া বলেছেন, বিজেপি বাংলাদেশী হিন্দু ভোটার ব্যাংককে খুশি করার চেষ্টা করছে। এসব হিন্দু ভোটব্যাংকের অনেকেই আসামের নাগরিকত্ব বিষয়ক ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি)-এ অন্তর্ভুক্ত হন নি। এসব করা হচ্ছে একটি লেজিসলেশন বা আইনের মাধ্যমে যা, আসাম চুক্তির বিরুদ্ধে যায়। বাংলাদেশীদের সহায়তা করতে গিয়ে আসামীয়দের পরিচয়কে খর্ব করছে বিজেপি। তারা হিন্দু ও মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আলাদা করতে চায়। ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে যারা এনআরসিতে নেই তার মধ্যে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক হিন্দু। সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিলের মাধ্যমে বিজেপি ১৯৭১ সালের জন্য নির্ধারিত তারিখকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করছে শুধু বাংলাদেশী হিন্দুদের জন্য। তারা এমন একটি প্যারালাল প্রক্রিয়া চালু করতে চায়, যার মাধ্যমে আসামে নাগরিকত্বের ইস্যুটি আরো হটিল হয়ে উঠা ছাড়া কিছুই অর্জিত হবে না।
উল্লেখ্য, রোববার জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির নির্বাহীদের বৈঠক হয়। তাতে আসামে এনআরসির চূড়ান্ত খসদার প্রশংসা করে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। তাতে জোর দিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে তা হলো- সব অনুপ্রবেশকারীকে সনাক্ত করা ও তাদেরকে ফেরত পাঠানোই হলো বিজেপির মনোভাব। পাশাপাশি সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিলের মাধ্যমে বাংলাদেশে, পাকিস্তানে ও আফগানিস্তানে নির্যাতিত সব হিনদু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও শিখদের সুরক্ষা দিতে চায় তারা।
বিজেপির এমন কর্মকান্ডে আসামে বিদ্রোহ ও সশস্ত্র অস্ত্রধারীরা বিদ্রোহ করে বসতে পারে, পরিস্থিতি সেদিকে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন অনুপ চেটিয়া। তবে বিজেপি জোটের অংশীদার এজিপি বলেছে, এমন কোনো দিকে পরিস্থিতি মোড় নিলে তারা তার প্রতিবাদ করবে। বিজনেস লাইনকে আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মাহাতো বলেছেন, বিজেপির বিভক্তি সৃষ্টির কৌশলের বিরুদ্ধে তার দল দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিবাদ করবে। তিনি আরো বলেন, আগেই আমরা বলে দিয়েছি, তাদের (বিজেপি) উচিত হবে না স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে রাজনীতি খেলা। তারা যখন ১৯৭১ সালের আগে আসা লোকদের বিষয়ে প্রস্তাব করে তখন অংশীদারদের সবাই তা মেনে নিয়েছিল। এখানে এখন প্রশ্ন এসে যায়, এই ধাতা থেকে হিন্দুরা কি বাদ?
বাংলাভাষীদের বিষয়ে এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আসামীয়দের পরিচয় হুমকির মুখে বলে অনেকদিন ধরেই বেশ কিছু পার্টি ক্ষোভ প্রকাশ করছিল। তার মধ্যে উলফা অন্যতম। এখন এনআরসি থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দুকে বাইরে রাখার বিষয়ে বিজেপিও উদ্বিগ্ন। তারা চাইছে এসব হিন্দুকে নিশ্চয়তা দিতে যে, সিটিজেনশিপ বিলের মাধ্যমে তাদেরকে সুরক্ষিত রাখা হবে। তবে তাদের সঙ্গে জোটে থাকা অন্যরা মনে করছে এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। এতে আসামের মতো বিভক্ত সমাজে শুধুই বিশৃংখলা বাড়াবে।
ওদিকে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের উপদেষ্টা সমুজ্জল ভট্টাচার্য বলেছেন, যারা ১৯৭১ সালের পরে এসেছেন তাদেরকে ফিরে যেতেই হবে। এক্ষেত্রে আমরা পরিষ্কার। তাতে তারা হিন্দু, মুসলিম বা যেই হোন না কেন। আসাম হলো আসামীয়দের। আমরা নাগরিকত্ব নির্ধারণে ১৯৭১ সালকেই সময় ধরতে চাই। কিন্তু বিজেপি খেয়ালখুশিমতো কাজ করতে পারে না। তারা তাদের এজেন্ড চাপিয়ে দিতে পারে না।
উল্লেখ্য, অনুপ চেটিয়া নিষিদ্ধ উলফার জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৯৭ সালের মার্চে তাকে প্রথম আসামে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তখনকার মুখ্যমনত্্রী হিতেশ্বর সাইকিয়ার সময়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপরে ১০৯৭ সালের ২১ শে ডিসেম্বর তাকে ঢাকায় আটক করা হয়। তার কাছে বিদেশী মুদ্রা ও একটি স্যাটেলাইট ফোন পাওয়া যায়। অবৈধভাবে প্রবেশ, ১৬টি দেশের মুদ্রা ও অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কারণে তাকে ৭ বছরের জেল দেয়া হয়। রাখা হয় কাশিমপুর জেলে। ওদিকে ভারত সরকার তাকে ফেরত দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করে। ২০১৫ সালের ১১ই নভেম্বর তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ।